ইঁদুরে জুমের ধান খাওয়ায় চিন্তায় পাহাড়ের চাষিরা

fec-image

পাহাড়ে জুমের ধান পাকা শুরু হয়েছে। এরমধ্যের বৃদ্ধি পেয়েছে ইঁদুরের আক্রমণ। অধিকাংশ জুমের ধান কেটে নষ্ট করছে ইঁদুরের। যার ফলে পাহাড়ের কৃষকরা দুঃচিন্তায় সময় পার করছে।

জুম চাষি তুফান চাকমা জানান, চার একর উঁচু পাহাড়ের জমিতে ধান লাগিয়েছেন। জুমের ধান মোটামুটি ভালোও হয়েছে। ধান কেটে এক মাসের খোরাকিও ঘরে তুলতে পারেননি। তিনি বলেন, ইঁদুরবন্যার কারণে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে কী খেয়ে বাঁচবেন, তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তাঁর।

তুফান চাকমার পাশাপাশি আরও অনেকে ইঁদুরের কারণে ধান ঘরে তুলতে পারেননি। এতে তীব্র খাদ্য সংকটের শঙ্কা করছেন এই চাষিরা।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে গাছ-গাছালি কেটে আগুনে পুড়িয়ে জমিতে যে চাষ করা হয়, তার নাম জুম চাষ। এ চাষ পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রথা। তবে এটি জীবিকার উৎসও।

পাহাড়ের ঢালু স্থান পরিস্কার করে মার্চ-এপ্রিলে পুড়িয়ে মাটি উপযুক্ত করা হয়। এরপর বৃষ্টি শুরুর আগে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধানসহ নানা সবজির বীজ বপন করা হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ধান ঘরে তোলেন জুমিয়ারা। ধানের পাশাপশি ভুট্টা, মারপা, মরিচ, বেগুন, শসা, শিম, তিল, ঢ্যাঁড়শ, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙে, করলা, ফোরল, আলু, শাবারাং (এক ধরনের সুগন্ধিযুক্ত সবজি), কচু বপন করা হয়। তাছাড়া তুলা, হলুদ ও সত্রং ফুলের (গাঁদা ফুল) চাষ হয়ে থাকে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলায় ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। হেক্টর-প্রতি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৩ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা কম হয়েছে। শুধু সাজেক ইউনিয়নে ৭৩০ হেক্টর জমিতে জুমের আবাদ করা হয়েছে।

দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নে সাজেক পাড়া, কংলাক, ওল্ডলংকর, ডুলুছড়ি, বেটলিং, শিয়ালদাই, লালু, খাস্যাপাড়া, শিলছড়ি, গণ্ডাছড়া, ছয়নাল ছড়া, পানছড়া উজান ছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ হাজার জুমিয়া পরিবার রয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফলন তেমন ভালো হয়নি।

কয়েকটি জুমক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, গাছ দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলেও শিষে ধান নেই। সব ধান ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে। যেসব ধান ইঁদুর খেতে পারেনি, সেগুলো ঘরে তুলছেন জুমিয়ারা।

সাজেক ইউপির সদস্য বন বিহারী চাকমার ভাষ্য, সাজেকের অনেক জায়গায় এ বছর ইঁদুরে ধান প্রচুর নষ্ট করে দিয়েছে। এ কারণে জুমিয়াদের খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান আতুলাল চাকমার দাবি, সাজেকে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। এবার ইঁদুরবন্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে জুমিয়া পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এসব পরিবারের খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, দু-একটি জায়গায় ইঁদুরের উপদ্রবে জুমের ফসল নষ্ট হয়েছে। সাজেক এলাকায় শতকরা দশভাগের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। ধান ৮০ ভাগ পেকে গেলে তা কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন