আলীকদমে জুম চাষের পাশাপাশি ঘর সামলাচ্ছেন প্রান্তিক ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নারীরা

fec-image

ঘর-দুয়ার সামাল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জুম চাষের পাশাপাশি পরিবার ও সংসার সামলাচ্ছে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী প্রান্তিক পাহাড়ি জনপদের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী নারীরা।

মূলত জীবন ও জীবিকার কথা চিন্তা করেই স্বামীর পাশাপাশি ধানের জমি ও জুম চাষে কৃষি কাজের দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ম্রো, ত্রিপুরা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যাঁ, মার্মা নারীরা।

ফসলি জমির বীজতলা তৈরি, সেচ কাজ পরিচর্যা, ধান মাড়ানো, নানা ধরনের সবজি চাষ কিংবা গোলায় ধান ভরার কাজও সামলাচ্ছেন অনেকেই। ফলে কৃষি কাজে দিন দিন বাড়ছে তাদের গুরুত্ব। তারাও জুম ঘরে কৃষিকাজ করে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করে ফসল বুনে বাজারে বিক্রি করে তাদের সংসারের অভাব কাটিয়ে মুখে ফুটেছে আলোর ঝিলিক।

সোমবার (২১ আগস্ট ) সকালে উপজেলার দুর্গম সীমান্তবর্তী ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের প্রান্তিক জনপদের বিভিন্ন গ্রামের এমন দৃশ্য দেখা গেছে। কুরুকপাতা ইউনিয়নের আওয়াই ম্রো পাড়া এলাকা থেকে মেনিও ম্রো নামের ১ জন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী নারী তার জুমে উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্য ঝুড়িতে ভরে মাথায় করে নিয়ে আসেন।

ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর নারী শ্রমিকরা জানান, একসময়ে পাহাড়ি শাক-সবজি, লতাপাতা বিক্রি করে অথবা অন্যের বাড়ি কাজ করে কোনো ভাবে চলতো সংসার। সারাদিন অন্যজনের ফসলের মাঠে কাজ করে ৩০০/৪০০ আয় রোজগার হয় এই গুলো দিয়ে চলতে হতো আমাদের। সারাবছর সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তবে এখন তারা জুম চাষের কাজ সামলিয়ে যেমন অভাব কাটিয়ে উঠছে পাশাপাশি সন্তানের পড়াশোনা করিয়ে ভালো ভাবে জীবন-যাপন করছে। যার কারণে উপজেলার দুর্গম সীমান্তের ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের প্রান্তিক জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।

বিগত সময়ে বর্তমান সরকারে অর্থায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (১৬ ইসিবি) ইঞ্জিনিয়ার কোর এর অধীনে সড়ক নির্মাণ হওয়ায় সহজে উৎপাদিত ফসল ন্যায্য বাজার মূল্য পাচ্ছে। তাই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি নারীরা এখন কৃষি কাজেই ঝুঁকছে এবং বাগান বাগিচা লাগিয়েও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে বলে জানান।

আলীকদম সদর ইউনিয়নের প্রভাত কারবারি পাড়া গ্রামের অন্তরা তঞ্চঙ্গ্যাঁ স্বামী, ১ মেয়ে ও ২ ছেলে নিয়ে তার সংসার। তিনি জানান, দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য কষ্ট করতে হয়েছে। বর্তমানে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে যেমন ভালোভাবে জীবনযাপন করছে পাশাপাশি নিজেরও কিছু জমি হয়েছে অন্যদিকে সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারছেন তিনি। এতেই সুখে শান্তিতে চলছে জীবন।

৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের মেনদন ম্রো পাড়া গ্রামের রেংয়েন ম্রো নামের একজন নারী জানান, আগে পাহাড়ি শাকপাতা তুলে বাজারে বিক্রি করতেন। বিক্রির অল্প টাকায় কষ্টে চলতো সংসার তবে এখন ফসলের মাঠ ও নিজের জুমে কাজ করে ভালোই চলছে তাদের জীবিকা নির্বাহ।পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি কলাবাগান করেছেন বলে জানান। সে কলাবাগান থেকে নিয়মিত কলা বিক্রি করে যে টাকা আয় রোজগার হয় সেগুলো দিয়ে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চলছে বলে জানান।

৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাত পুং ম্রো বলেন, এখন প্রান্তিক পর্যায়ে ম্রো নারীরা এখন গ্রামে বসে নেই। তারা জুমে মিশ্র সবজি চাষ করে নিজের উৎপাদিত পণ্য ফসল বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এখন অনেকই পুরুষের পাশাপাশি ম্রো নারীরা বাগান-বাগিচা রোপণ করেছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন,আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে ধাপ এগিয়ে গেছে এই দুর্গম পাহাড়ি জনপদ। এখন সহজেই উপজেলা সদরে সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। কুরুকপাতা ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা বাগানে উৎপাদিত কৃষিপণ্য যেমন, আঁদা, হলুদ, মরিচ, ভূট্রা, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি বিক্রি করে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়ে উঠে বলে জানান।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় জানান, উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের বেশির ভাগ নারীরাই কৃষি ফসলের মাঠে কাজ করেন। আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নারী শ্রমিকরা অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি নিজেরায় দক্ষতার সঙ্গে ফসলচাষ করে সফল হচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ২শত ৯০ হেক্টর জমিতে আউস ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩.৪০ হেক্টর আউস ধান রোপন হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান স্বাদ ১ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জুম চাষ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন