ইউপিডিএফ‘র মানিকছড়ি মিশন : গন্তব্যের শেষ কোথায়?

16.08.2015_Manikchari NEWS (Motamot) Pic

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

দিনের পর দিন উত্তপ্ত হচ্ছে মানিকছড়ির শান্ত জনপদ। চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ‘র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যকে সামনে রেখে হত্যা, গুম আর অপহরণের জনপদে পরিণত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদ মানিকছড়ি। গেল বছরের ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে মানিকছড়ির স্কুল শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চিংসা মং চৌধুরীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে এ মিশন শুরু করে চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ। একই সময়ে ইউপিডিএফ‘র হামলার শিকার হন চুক্তির পক্ষের জনসংহতি সমিতি-জেএসএস‘র মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি মংসাথোয়াই চৌধুরী জাপান বাবু। গুলিবিদ্ধ জাপান বাবু প্রাণে রক্ষা পেলেও ঘটনাস্থলেই নিহত হন জনপ্রিয় স্কুল শিক্ষক ও অঅওয়ামীলীগ নেতা চিংসা মং চৌধুরী। সে থেকে আর শান্তি ফেরানো যায়নি মানিকছড়িতে।

গুম, অপহরণ আর চাঁদাবাজির মতো একের পর বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরও যখন মানিকছড়িতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হচ্ছিল তখনই উগ্রসাম্প্রদায়িক ইউপিডিএফ নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। নতুন খেলার অংশ হিসেবেই ইউপিডিএফ‘র প্রত্যক্ষ মদদে মানকিছড়ির বক্রিপাড়ায় বাঙালীদের কবুলিয়তভুক্ত ও ভোগদখলীয় জমিতে মন্দির নির্মাণের চেষ্টা চালায় স্থানীয় উপজাতিয় সন্ত্রাসীরা। এনিয়ে নতুন করে পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে বিরোধকে উস্কে দিয়ে শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করে ইউপিডিএফ। শুধুমাত্র নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের পথকে সুগম করতেই ইউপিডিএফ কল্পিত ভূমি বিরোধকে পূঁজি করে পাহাড়ী-বাঙালীকে আজ মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

সম্প্রতি মানিকছড়ির গচ্ছাবিলস্থ বক্রিপাড়া, ওয়াকছড়িপাড়া, মনাধনপাড়া, হাফছড়ি, উত্তর হাফছড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাঙালীদের জায়গা উপজাতিয়রা দাবী করে শান্ত পরিবেশে অশান্ত করার পায়ঁতারা শুরু করে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাঙালীদের পরিত্যক্ত ভূমিতে ধর্মীয় নিশানা উড়িয়ে মন্দির নির্মাণের নামে জায়গা জবর-দখল শুরু করলে পাহাড়ী-বাঙালীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিতর্কিত ভূমিতে স্থিতবস্থা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ তথাকথিত ভূমি রক্ষা কমিটির ব্যানারে মাঠে নামে। ভূমি রক্ষার দাবীতে ইউপিডিএফ ১৫জুলাই মানিকছড়িতে সমাবেশ আহ্বান করে।

একই সময়ে জেএসএস নেতা মংসাথোয়াই চৌধুরী জাপান বাবু হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস। এনিয়ে পরিস্থিতি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। বিবদমান দু’টি দলের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে সংঘাত ও সহিংসতা এড়াতে মানিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন মানিকছড়ির কিছু অংশে ১৪৪ ধারা জারি করে।

এ ঘটনার উত্তাপ না থামতেই মানিকছড়ির হাতিমুড়ার ভিজাবাউন্তি এলাকায় সশস্ত্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবী করে শ্রমিকদের কাছে। শ্রমিকরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের নিকট থেকে ৫ টি মোবাইল, ২টি কোদাল নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় ৭ দিনের মধ্যে চাঁদা না দিলে বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। শুধুমাত্র হুমকি দিয়েই দমে যায়নি ইউপিডিএফ‘র স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তারা গেল ১০ আগস্ট মধ্যরাতে মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঙালী লোকালয় হাতিমুড়ার অদূরে ভিজাবাউন্তি নামক এলাকায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ‘র মদদে উপজাতিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাঙালীদের বসত ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। এসময় সন্ত্রাসীরা লুটপাট করেই ক্ষান্ত হয়নি মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরীফ ছিঁড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়।

পাহাড়ের সর্বত্র যখন শান্তির সু-বাতাস বইছে। মানিকছড়িতে পাহাড়ী-বাঙালী জনগোষ্ঠির মাঝে যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজমান তখনই মানকিছড়িতে সাম্প্রদায়িক ফ্যাসাদ সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ। নানা বিচ্ছিন্ন ইস্যুকে সামনে এনে সেখানে কৌশলে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

একটি আইনগত বিষয়কে আন্দোলনের মাধ্যমে উস্কে দেয়াকে চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-“ইউপিডিএফ‘র মানিকছড়ি মিশন” হিসেবেই দেখছে উপজেলার সচেতন মহল। তারা মনে করছে মানিকছড়ির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ইউপিডিএফ‘র সব ধরনের অপরাজনীতি শক্ত হাতে বন্ধ করা না হলে আবারো রক্ত ঝরবে মানিকছড়িতে। আবারো চিংসা মং চৌধুরীর মতো অন্য কোন নক্ষেত্রের পতন হবে। ইউপিডিএফ‘র মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের পথে প্রাণ ঝরবে কোন ভাইয়ের আর বিধবা হবে কোন বোন। জেলা-উপজেলার সচেতন মহলের প্রশ্ন একটাই ইউপিডিএফ‘র “মানিকছড়ি মিশন”র শেষ কোথায়..?

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন