ঈদ ঘিরে কক্সবাজারে যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া, বিপাকে পর্যটকরা
ছৈয়দ আলম:
চলতি ঈদুল আযহা ও পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজার শহরের একাধিক সড়ক-উপসড়কে যানবাহনের দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে সাধারণ যাত্রী ও পর্যটকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ে নেমেছে কতিপয় চালকরা যার যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। অনেকে ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে যেতে চাইলেও দ্বিগুণ ভাড়ার কারণে যেতে অনিহা প্রকাশ করছে।
শুধু ঈদ আর বৃষ্টিপাত নয় নানা অযুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। রিক্সা, টমটম, ভটভটি, মাহিন্দ্রা, সিএনজি ও অটোরিক্সাসহ অপরাপর গাড়ী চালকরা সড়কে তাদের মনগড়া ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে একের পর এক অবিযোগ উঠেছে। এমনকি দশ টাকার ভাড়া ৩০-৪০ টাকা হারে নিচ্ছে। যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে না চাইলে চালকরা ঈদ মৌসুমের দোহায় দিয়ে চালানোর মজুরীসহ ঈদের বকশিস আদায়ের নামে ঈদে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেড়াতে যাওয়া লোকজনদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এর প্রতিবাদ করতে চাইলে যাত্রীরা লাঞ্চিতসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের শিকার হয়ে থাকে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজার বাসটার্মিনাল, বাজারঘাটা, কলাতলি, হলিডে মোড় ও হোটেল মোটেল এলাকাসহ অসখ্য সড়কে ইচ্ছামাফিক ভাড়া আদায় করছে চালকরা। অনেক সময় ভাড়া নিয়ে চালক এবং যাত্রীদের মাঝে তর্কাতর্কিসহ হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে এমন চিত্রও দেখা গেছে। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকায় কক্সবাজারে বেড়াতে আসা ফারুক নামের এক পর্যটকের সাথে রিক্সার ড্রাইভারের মধ্যে ভাড়া নিয়ে হাতাহাতির চিত্রও দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক এ ঈদে শশুর বাড়ীতে অটোরিক্সা নিয়ে বেড়াতে গিয়ে ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন বলে জানিয়েছেন। বলতে গেলে ঐ যুবক ৩০ টাকার ভাড়ার পরিবর্তে ঈদ উপলক্ষে ৮০ টাকা দেওয়ার পরেও ঐ রিক্সা চালক ১০০ টাকার নিচে তার পিছু ছাড়ছে না। অবশেষে লাঞ্চনার ভয়ে কলাতলিস্থ শশুর বাড়ীতে যাওয়া ঐ যুবক রিক্সা ওয়ালার সে নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হলো।
বেশ ক’জন সচেতন যাত্রীর ভাষ্যমতে, দেশের বহুল আলোচিত পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নেই কোন যানবাহনের নির্দিষ্ট ভাড়া তালিকা। যার ফলে যে যার যার মত মনগড়া যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদের বাহানা দিয়ে ভাড়া আদায় করতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোন কেন্দ্রিক কয়েকটি রিক্সা ও টমটম এবং সিএনজি সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়েছে বলে একাধিক লোকজন জানিয়েছেন। তারা এ জোনে তাদের বাইরের কোন গাড়িকে প্রবেশ করতে দেয়না। এসব সিন্ডিকেটের কারণে আগত পর্যটকরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তাদের গাড়িতে উঠতে হয়। তারা হোটেল ও রেস্তোরার সাথে চুক্তি করে কমিশন ভিক্তিক টাকা আদায় করে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার পৌরসভা উদ্যোগ নিলে শহরে আগত পর্যটকদের ভাড়া নিয়ে দুর্ভোগ আর দুর্গতি পোহাতে হতনা বলে পর্যটকদের মত । অতিসত্ত্বর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভাড়া তালিকা শহরের মোড়ে মোড়ে প্রকাশ করার জন্য জোর দাবী জানান অনেকে। সচেতন মহল আরো জানান, পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে এই ভাড়া বানিজ্য বন্ধ না হলে অচিরেই কক্সবাজারের সুনাম ক্ষুন্ন হবে এবং সড়কে অধিকাংশ অদক্ষ ড্রাইভার ও অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধে জরুরী ভিত্তিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, হোটেল মোটেল জোন ও সড়কে সার্বক্ষনিক পুলিশী নজরদারী রয়েছে। পর্যটক ও সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি না হয় সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিক ও হোটেল মালিকদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে।