কক্সবাজারে নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাচ্ছে স্ক্যানু ইউনিট

DSCN0123

নিজস্ব প্রতিনিধি:

মায়ের পেটে শিশুরা প্রকৃতিগতভাবে নিরাপদে থাকে। পেটের ভিতরে শিশুর খাদ্য সরবরাহ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শ্বাস-প্রশ্বাসসহ বেঁচে থাকার সার্বিক ব্যবস্থা থাকে। আর যখনই শিশুটি মায়ের পেটের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জন্মলাভের মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশে আসে তখন খুব সহজে খাপ খাইয়ে উঠতে পারেনা। অনেক নব জাতক মায়ের পেট থেকে নানা অসুখ-বিসুখ নিয়ে জন্ম নেয়। অনেকে আবার জন্ম লাভের পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে অনেক শিশু মারা যায়। শূণ্য থেকে ২৮ দিন বয়সী নবজাকদের এই মৃত্যুর হার কমাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রয়েছে স্ক্যানু (নবজাতক শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিট) নামে এক ওয়ার্ড।

এই ইউনিটে সর্ব সাধারণনের প্রবেশ নিষেধ। চিকিৎসক ও দায়িত্বরত সেবিকা আর শিশুর একজন অভিভাবক ছাড়া অন্যরা প্রবেশ করতে পারে না। ইউনিটটি খুবই পরিষ্কার পরিছন্ন। চারদিকে কাঁচ দিয়ে ঢাকা। শব্দ ও দূষিত বাতাস থেকে মুক্ত রাখতে এই ব্যবস্থা। এই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের রয়েছে বিশেষ পোষাক। এমনকি অভিভাবকদের ওই পোষাক পরেই ওখানে অবস্থান করতে হয়। সেখানে প্রত্যেক নবজাতকের জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের সিট। এসব সিটের চারপাশে রয়েছে চিকিৎসা সেবার নানা যন্ত্র।

স্ক্যনু ইউনিটে এই ধরনের সিট রয়েছে ২৪ টি। পুরো পরিবেশটি নিরব-নিস্তব্দ। চিকিৎসক ও সেবিকারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন নিরবে। স্ক্যানু ইউনিটে গত ২৫ তারিখের তথ্যে দেখা যায়, সদর হাসপাতালেই জন্ম লাভ করা ঝুকিপূর্ণ ৫ নবজাতক চিকিৎসা নিচ্ছে স্ক্যানুতে। এছাড়া বর্হিরাগত নবজাতক চিকিৎসা নিচ্ছে ১৫ জন। এসব নবজাতক শূণ্য থেকে ২৮ দিন বয়সী।

শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে অবস্থিত এই স্ক্যানু ইউনিটের ফলে দিন দিন কমছে নবজাতক মৃত্যুর হার। এটি জেলাবাসীর জন্য সৌভাগ্যের বিষয় বলে মত প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকেই জানেন না এই স্ক্যানুর ব্যাপারে। ফলে ভূমিষ্ট হওয়া নবজাতক সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি মারাও যাচ্ছে। সদর হাসপাতালে এই ইউনিট থাকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শহরবাসী। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত স্ক্যানু ইউনিটে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।

মহেশখালী উপজেলার ইউনুছ খালীর আব্দুল হাকিমের স্ত্রী মোমেনা বেগম জানান, তার ৫ দিনের সন্তানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের স্ক্যানুতে রাখা হয়েছে। তার সন্তান এখন সুস্থের পথে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার পুচনু জানান, ঢাকা ছাড়া শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালেই রয়েছে স্ক্যানু। ২০১২ সালে জুন মাসে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র স্বাস্থ্য সচিব হুমায়ুন কবিরের উপস্থিতে এই ইউনিট উদ্বোধন করা হয়। স্ক্যানু ইউনিটে চিকিৎসা সেবার ফলে নবজাতক মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

তিনি আরো জানান, মূলত ৫ টি কারনে শিশুদের স্কেনুতে রাখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তা হল, ওজন কম হয়ে জন্মলাভ করা, অপরিপূর্ণ অবস্থায় জন্মলাভ, জন্মের পর রোগাক্রান্ত হওয়া, জন্ম থেকে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া অথবা নিশ্বাস নিতে না পারা ও জন্ম থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত হলে তাদের স্ক্যানুতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি জানান, এই স্ক্যানুর উপর তিনি শ্রীলংকা থেকে ১ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তিনি। এই ইউনিট পরিচালিত হয় ইউনিসেফ এর অর্থায়নে। শুরুর দিকে ১০ টি সিট (বিশেষ সিট) থাকলেও চাপ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ২৪ টি সিট রয়েছে স্ক্যানু ইউনিটে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন