কক্সবাজারে নিউমোনিয়ায় এক সপ্তাহে ১৭ শিশুর মৃত্যু

DSCN0078

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে নিউমোনিয়া রোগীর প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যার বেশিভাগই শিশু। গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা। একই সাথে বাড়ছে ডায়েরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক সৌরভ দত্তের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে শীত জনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হরে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩৭ জন। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরো ১৪৬ জন শিশু ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া সর্দি, কাঁশি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগও শিশুদের আক্রান্ত করছে।

রোগির স্বজনরা জানান, শিশু রোগীদের সিট না পেয়ে ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে। রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ, যথাসময়ে চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। আর নার্স (সেবিকারা) অবহেলা করছে সেবা প্রদানে। তাদের অবহেলার কারনেই রোগীরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাচ্ছে না। এর ফলে অনেক সময় মারা যাচ্ছে শিশু রোগী।

শিশু ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রামু উপজেলার ঈদগড়ের ৯ মাসের শিশু রুমাইসার মা খদিজা বেগম বলেন, সদর হাসপালে অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে তার শিশুর চিকিৎসা পেতে দেরি হয়েছে। ফলে তার শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মারাত্মকভাবে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাকে অক্সিজেন (নেব্যুলাইজার) দেয়া হয়।

একইভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু জয়নব বিবির মা খাদিজা বেগম জানান, তার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে রোগীর জন্য সিঙ্গেল বেড পাননি। একই সঙ্গে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া চিকিৎসক ও সেবিকারাও যথাসময়ে দেখা-শুনা করছেন না।

ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্সিং সুপারভাইজার জানান, নার্সরা সবসময় নিরলস প্রচেষ্টায় থাকে রোগীদের সেবা প্রদানে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। সল্প সংখ্যক সেবিকার দ্বারা সকলকে সেবা প্রদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে। দিনে-রাতে ৫ জন নার্স দায়িত্বে থাকলে সিফ্ট ভাগ করার কারণে অনেক সময় ২ জন নার্সকে ৭০-৮০ জন রোগী সামাল দিতে হয়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সুলতান আহমদ সিরাজী জনান, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে। নার্স ও চিকিৎসকরা বরাবরেই দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর কারনে সামলিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া সদর হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় নার্স ও চিকিৎসকের সংখ্যা কম।

এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে চিন্তিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন