দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

কক্সবাজার-১ আসনে কে পাচ্ছেন নৌকা?

fec-image

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে গেল শনিবার থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য ফরম বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) পর্যন্ত এ মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদান তারিখ নির্ধারণ করেছে দলটি।

এরই মাঝে সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংসদ নির্বাচন ঘিরে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ ও লবিং শুরু করেছে। একদিকে যেমন চলছে নির্বাচনের আমেজ অন্যদিকে দলীয় মনোনয় কে পাচ্ছেন তা নিয়ে পক্ষান্তরে চলছে নানা গুঞ্জন। জাতীয় সংসদের ২৯৪ সংসদীয় আসন হচ্ছে কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া। পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনকে ঘিরেই এখন থেকে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু করেছে ভোটারেরা।

কক্সবাজার-১ আসনটি চকরিয়া-পেকুয়া দুই উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। দুই উপজেলার বর্তমান সর্বশেষ ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৩ জন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১১৪টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৪৭ জন পুরুষ ও এক লাখ ৬৪ হাজার ২৪২ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৯ জন। এছাড়াও পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪৪ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৭২ হাজার ৫৫ জন পুরুষ ও ৬০ হাজার ৮০৯ নারীসহ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৪ জন। দুই উপজেলায় সর্বশেষ মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৩ জন।

জানাগেছে, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল মতে আগামী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুযা) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড.মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম সজিব, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ আমিনুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া, নুরুল আজিম কনক ও মহিউদ্দিন বাবর মুকুল দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে সূত্রে জানাগেছে।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, আওয়ামীলীগের জন্য এবারের জাতীয় নির্বাচন একটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। সুতরাং সকল বিভাজন ভুলে দলীয় সভানেত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দেবেন তার পক্ষে সবাই কাজ করবে৷ তবে নৌকা প্রতীক চয়নে ভূল হলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা সুযোগ নেবেন। এছাড়া দলীয় ভাবে নানা কর্মকান্ডে বঞ্চিতরা তাদের বিস্ফোরণও ঘটাতে পারে। কারণ তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের তলে তলে ব্যাথা রয়েছে।

কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনে দলীয় ও সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা যিনি সবসময় সুখে-দুঃখে মাঠে ময়দানে অতীতেও ছিলেন ভবিষ্যতেও দেখা মিলবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে তারা মনোনীত করে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করবেন। তবে শেষপর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে চকরিয়া-পেকুয়া নির্বাচনী এলাকায় কে হচ্ছেন নৌকা মাঝি, ধানের শীষ, লাঙ্গল কিংবা অন্যান্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন তা এখন দেখার বিষয়।

এদিকে, চকরিয়া-পেকুয়া আসন থেকে ১৯৯১ সালে জামায়াত প্রার্থী এনামুল হক মঞ্জু ও ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ পর পর দু’বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমদ কারাবন্দি থাকায় তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। তবে ১৯৭৩ এর নির্বাচনে ডা: শামসুদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে এ আসনে জিতেছিলেন। এরপরে এই আসন থেকে সংসদ নির্বাচিত হন বিএনপির মরহুম মাহমুদুল করিম চৌধুরী, এরই পরে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ এইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে ৪৩ বছর পরে এই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদকে পরাজিত করে ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম। তবে সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬ সালে তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও একবারও তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী ও জেলা জাপার আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

অপরদিকে, ফরম বিক্রির সময় না বাড়িয়ে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা। মনোনয়ন বোর্ডের সভাতেই চূড়ান্ত হবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারি হচ্ছেন কারা। এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর চকরিয়া-পেকুয়া আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্যসহ একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। তবে কার হাতে উঠেছে নৌকার প্রতীক? শেষ হাসিটা কে হাসছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন