করোনা ভাইরাসকে ঘিরে চকরিয়ায় সিন্ডিকেট চক্রের কবলে চালের বাজার

fec-image

করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়ায় অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। কয়েক দিনের ব্যবধানে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের প্রতিবস্তা চাউলের দামে বেড়েছে দুই থেকে তিনশত টাকা। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে প্রশাসন থেকে ছাড়কৃত খাদ্য সষ্যের ডিও’র বিপরীতে চকরিয়া থেকে শত শত মেট্রিন টন বরাদ্দের চাউল সরিয়ে নিচ্ছেন লোহাগাড়া চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক বগিরাহত সিন্ডিকেট ডিও ব্যবসায়ী চক্র।

অপরদিকে গতমাসে চকরিয়া উপজেলা খাদ্য বিভাগের পক্ষথেকে সম্পন্ন হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ কর্মসূচি। ফলে এখন এলাকার কৃষকদের মোকামে নেই মজুদ ধান। অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ডিও’র বিপরীতে বরাদ্দের চাউল বহিরাগত এলাকায় চলে যাওয়ার কারণে বর্তমানে অবৈধ ডিও ব্যবসায়ী চক্রের কবলে জিন্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ঘোষণার আলোকে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার ৭৭৮জন কৃষকের কাছ থেকে গতমাসে ধান সংগ্রহ কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে খাদ্য প্রশাসন। ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে সরকারি মনিটরিং জোরদার ও ভালো দাম পাওয়ায় এলাকার কৃষকরা তাদের মোকামের বেশিরভাগ ধান সরকারি গুদামে সরবরাহ দিয়ে ফেলেছেন।

অপরদিকে এখনো মাঠে কর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে চলতি মৌসুমের আমন ধান চাষ। ফলে বর্তমানে উপজেলার প্রায় প্রতি এলাকায় কৃষকের হাতে নেই মজুদ ধান।

অন্যদিকে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি তরফে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের বরাদ্দের বিপরীতে এগিয়ে চলছে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য মন্ত্রাণালয় থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সষ্য বা চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পের বিপরীতে প্রশাসন থেকে দুইদাফে অন্তত সাড়ে ৬ শত মেটিক ট্রন চাউলের ডিও ছাড় দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ছাড়ও দেয়া এসব চাউলের ডিও হাতিয়ে নিয়েছেন বহিরাগত এলাকা লোহাগাড়া ও চট্টগ্রামের সিন্ডিকেট ডিও ব্যবসায়ী টুনু সওদাগর, আবদুল জব্বার ও সামসুল আলমের নেতৃত্বে একটি চক্র। তাঁরা ইতোমধ্যে ডিও’র বিপরীতে বরাদ্দের চাউল সমূহ চকরিয়ার বাজারে বিক্রি না করে লোহাগাড়া ও চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজারে চাউলের চরম সংকট তৈরি হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা রাইস মিল মালিক সমিতির কর্মকর্তারা বলেছেন, গতমাসে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর সরকারি ঘোষণার আলোকে চকরিয়ার প্রতিটি এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে ধান কিনে নিয়েছেন। এখন মাঠে আছে চাষকৃত আমান ধান। এগুলো কৃষকের হাতে আসতে আরও একমাস সময় লাগবে। এই অবস্থার কারণে বর্তমানে চকরিয়ার কোন কৃষকের হাতে ধান নেই। ফলে রাইচ মিল গুলোতে ধান সরবরাহ না থাকায় চাউল উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।

রাইচ মিল মালিক সমিতির লোকজনের দাবি, একদিকে সরকারি কর্মসূচির আলোকে এলাকার কৃষকরা গতমাসে মোকামের সব ধান খাদ্য বিভাগকে বিক্রি করে দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ডিও’র বিপরীতে বরাদ্দের চাউল অন্য এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন ডিও ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থার কারণে চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি রাইচ মিল ছাড়াও হাট-বাজারে চাহিদা মতো চাউলের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন চট্টগ্রামস্থ চাউল কিনে এনে রাইচ মালিক ও দোকানীদেরকে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিঠাতে হচ্ছে। আর এসব কারণে মাসের ব্যবধানে প্রতিবস্তা চাউলে দুইশত থেকে তিনশত টাকা করে দাম বেড়ে গেছে।

উপজেলার একাধিক হাট-বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখাযায়, বদরখালী বাজার, ইলিশিয়া বাজার, চকরিয়া পৌরশহর, ডুলাহাজারা, খুটাখালী বিএমচর, কোনাখালী, হারবাং ও বরইতলীসহ বিভিন্ন বাজারে মিনিকেট চাল প্রতিকেজি বিক্রি হতো ৫২টাকা এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০টাকা বা তারও উপরে। মোটা চাল বিক্রি হতো ৪০-৪২টাকা কেজিতে এখন সেই চাল কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা।

আবার দামের ক্ষেত্রে এক একটি এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন দামে পাওয়া গেছে চালের দাম। এ নিয়ে কোন ব্যবসায়ীরা সদুত্তর দিতে পারছে না। আবার অনেকে বলেছেন, কারোনা ভাইরাস ইস্যুর জন্য চাউল আমদানী জটিলতাকেও দায়ী করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে চাউলের বাজারে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন