কৃষি গবেষণায় পিএইচডি অর্জন করেছেন রামগড়ের মোমিন

fec-image

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল মোমিন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে তিনি এই ডিগ্রি লাভ করেছেন। ড. মোমিনের পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘অ্যাডাপশন গ্যাপ অব ব্রি রিলিজ বোরো ভ্যারাইটিজ, টুয়ার্ডস ডেভিলপিং এন ইম্পিরিক্যাল অ্যাডাপশন মডেল’। গবেষণায় তার পিএইচডি উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন শেকৃবির কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. সেকান্দার আলী।

উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গত ১১ জুন ২০২৩ অনুষ্ঠিত সভায় পিএইচডি ডিজারটেশন উপস্থাপনা ও সাক্ষাতকার শেষে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন বোর্ডের সদস্যরা। উপদেষ্টা বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- শেকৃবির কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, ড. মাহবুবুল আলম এবং এগ্রি বিজনেস অনুষদের অধ্যাপক ড. মিজানুল হক কাজল। পিএইচডি থিসিসের চূড়ান্ত নিরীক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম। দেশের বৃহৎ চারটি বোরো উৎপাদনকারী জেলা কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল এবং বগুড়া জেলার অন্তর্গত চারটি উপজেলার (মুরাদনগর, নান্দাইল, মীর্জাপুর এবং শেরপুর) ১২টি ব্লকের ৩৭১ জন সিআইজি কৃষকের উপর পরিচালিত জরিপের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

দেশে বোরো মওসুমে ব্রি উদ্ভাবিত ১০টি নির্বাচিত বোরো জাতের অভিযোজন হার নির্ণয় এবং মাঠ পর্যায়ে এগুলো সম্প্রসারণের সমস্যা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণসমূহ উদ্ঘাটনে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায় ব্রি উদ্ভাবিত ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯ এখনো মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। তবে ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৮৯ অপেক্ষাকৃত নতুন জাত হলেও এই দুটি জাতের অভিযোজন অতি দ্রুত বাড়ছে। এই দুটি নতুন জাত মাঠপর্যায়ে পুরনো জাতগুলোকে কার্যকরভাবে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছে। তবে, এজন্য প্রয়োজন বীজ ও উপকরণ সহায়তা। গবেষণা এলাকায় ব্রি উদ্ভাবিত নির্বাচিত ১০টি বোরো জাতের অভিযোজনের হার ছিল শতকরা ৭৭ ভাগ। অন্য জাতের অভিযোজনের হার ছিল ২৩ ভাগ। এই ২৩ ভাগ এলাকায় বর্তমানে ব্রি জাত বর্হিভূত দেশি-বিদেশি জাত চাষ হয় যেখানে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বোরো জাতের আবাদ সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, কৃষক পর্যায়ে নতুন জাত স্মপ্রসারণে কৃষক কর্তৃক যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন সেগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নতুন জাতের বীজ প্রাপ্তি সমস্যা। এছাড়া বোরো আবাদে ঋণ অপ্রতুলতা ও ঋণের প্রাপ্তি সমস্যা, সার-বীজসহ আবাদ উপকরণের উচ্চমূল্য, সময়মতো সেচের পানি না পাওয়া, নতুন জাত সর্ম্পকে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়াসহ এই ধরনের ৩০টি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন গবেষণা এলাকার কৃষকরা এবং এগুলো সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় বিষয়ে ছয়টি পরামর্শ প্রদান করেছেন তাঁরা। এগুলোর মধ্যে প্রথমত: বীজ ও উপকরণের সহজলভ্যতা, বোরো আবাদে নির্বিঘ্নে ঋণ প্রাপ্তি, সেচ প্রণোদনা প্রদান, ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রির নিশ্চয়তা এবং সম্পপ্রসারণ ও ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কার্যকর সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকের সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুল মোমিন তাঁর গবেষণার উপসংহারে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সমস্যা সমাধান ও সমস্যা সমাধানে কৃষকদের পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি জাত সম্প্রসারণ মডেল প্রস্তাব করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে- উপকরণ সহায়তা পেলে কৃষক পর্যায়ে নতুন জাত ও প্রযুক্তির অভিযোজন সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

ড. মো. আব্দুল মোমিন ১৯৮০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৫ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক সম্মান এবং ২০০৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যথাক্রমে ২০১১ এবং ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে মাস্টার্স (এমবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। এই গবেষক ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ছিলেন। ২০০৬ সালে দৈনিক সমকালের সাব-এডিটর (কৃষি পাতা, ইনচার্জ) হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি দৈনিক যায়যায়দিনে প্রায় দু’বছর সহসম্পাদক পদে কাজ করেন। পরবর্তীতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে (এমআরএ) পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন প্রফেশনাল হিসেবে আরো প্রায় দু’বছর চাকরি শেষে ৬ জানুয়ারি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। তিনি ‘ব্রি রাইস মিউজিয়াম’ নামে একটি কর্মসূচির পরিচালক হিসেবে সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করেন। এটি দেশের প্রথম রাইস মিউজিয়াম।

ড. মোমিন একজন ফ্রিল্যান্স কৃষি সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ বেতারের কৃষি কার্যক্রমের একজন নিয়মিত রিসোর্স পারসন। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন । ২০১৬ সালে তিনি কৃষি সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য শের-ই-বাংলা পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৮ সালে তিনি পিএইচডি করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল থেকে ইন-কান্ট্রি স্কলারশিপ লাভ করেন। তিনি দেশে এবং বিদেশে সায়েন্স কমিউনিকেশনে বিষয়ে বেশ কয়েকটি পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ নেটওয়ার্ক (ইঅঊঘ), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কওই) এর আজীবন সদস্য। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে তার পাঁচশতাধিক কৃষি বিষয়ক জনপ্রিয় নিবন্ধ এবং ধান ধ্যান ও বিজ্ঞান নামে তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি, পিএইচডি, রামগড়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন