এক আসনের জন্য লড়ছেন ১৯ প্রার্থী

কে হচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি?

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামের এখনকার প্রধান আলোচ্য বিষয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদে কে হচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। পার্বত্য চট্টগ্রামের এখন সর্বত্র একটিই আলোচিত বিষয়। দ্বাদশ সংসদে কে হচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি? জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের হাট-বাজার-চায়ের দোকান সবখানেই এখন এই আলোচনা চলছে। যতদূর জানা গেছে, তিন জেলা থেকে ২০ জনেরও বেশি নেত্রী মনোয়ন ফরম কিনেছেন এমপি প্রার্থী হিসেবে। তাদের বেশিরভাগই এখন ঢাকায় দলের ঊর্ধ্বতন নেতা-নেত্রীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষ হাসি কে হাসবেন তা জানেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে নির্বাচিত হবেন তিনিই হবে নারী এমপি।

সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদে ৩০০ জন এমপি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। এর বাইরে আরও ৫০ জন সংরক্ষিত নারী আসনের এমনি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৫০ জন সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ৪৮ জন হবেন আওয়ামী লীগ থেকে। এর আগে দশম ও একাদশ সংসদে পার্বত্য তিন জেলা একজন নারী এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার জন্য অনেকেই জোর লবিং করছেন।

পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন খাগড়াছড়ি থেকে ৯ জন, রাঙ্গামাটি থেকে ৮ জন এবং বান্দরবান থেকে ২ জন নেত্রী। এর বাইরেও কেউ কেউ থাকতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাদের প্রত্যেকেরই দলীয় এবং স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের মধ্যে কে হচ্ছেন নারী এমপি সেটি হয়তো জানা যাবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার, সেদিন মনোনয়ন সংগ্রহকারী সকলকে প্রধানমন্ত্রী ডেকেছেন গণভবনে। সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড বসবে। সেখানেই চূড়ান্ত করা হবে নারী এমপিদের তালিকা।

পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দীঘিনালা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদা বেগম লাকী, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শতরুপা চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনা আক্তার, জাতীয় মহিলা সংস্থা খাগড়াছড়ির চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য নিগার সুলতানা, খাগড়াছড়ির জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার স্ত্রী ক্রসাইয়ো মার্মা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুইচিং মার্মা, বাসরী মার্মা এবং খাদিজা বেগম।

পার্বত্যনিউজ আরও জানতে পেরেছে, রাঙ্গামাটি থেকে ফরম নিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শীলা রায়, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মনোয়ারা আক্তার জাহান, রাঙ্গামাটি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিতা দেওয়ান, জেলা কৃষকলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সদস্য ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শান্তনা চাকমা,  রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখিকা চাকমা এবং রাঙ্গামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের বড় ভাইয়ের স্ত্রী টুকু তালুকদার। এছাড়াও পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার স্ত্রী রিপা চাকমা ফরম নিয়েছেন বলে পার্বত্যনিউজকে একাধিক সূত্র জানায়। তবে নিখিল কুমার চাকমা পার্বত্যনিউজকে নিশ্চিত করেন, উনার স্ত্রী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।

বান্দরবান থেকে ফরম নিয়েছেন বান্দরবান সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সুচিত্রা তঞ্চঙ্গ্যা এবং বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যাপিকা রওশন আরা।

সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য পদে নির্বাচন প্রসঙ্গে একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, তিন পার্বত্য জেলা থেকে অনেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আমিও একজন কেন্ডিডেট হিসেবে ফরম নিয়েছি। এখন প্রধানমন্ত্রী যাকে দেন, আমরা তাকেই ওয়েলকাম জানাবো।

দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ফিরোজা বেগম চিনু পার্বত্যনিউজকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা থেকে যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন, তারা সবাই দলকে ভালবাসেন বলেই কিনেছেন। আমার পক্ষ থেকে সবাইকেই শুভেচ্ছা জানাই। আর আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী যাকে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করবেন, আমরা তাকেই স্বাগত জানাবো।

তিন পার্বত্য জেলার প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদা বেগম লাকী পার্বত্যনিউজকে জানান, তিন পার্বত্য জেলার পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নয়নে কাজ করার জন্য তিনি নির্বাচিত হতে চান।

শতরুপা চাকমা পার্বত্যনিউজকে জানান, আমার রাজ‌নৈ‌তিক গুরু, জন‌নেতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কু‌জেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির দিক নি‌র্দেশনায় উৎসা‌হিত হ‌য়ে তৃণমূল পর্যা‌য়ে কাজ করার আমার অ‌নেক সু‌যোগ হ‌য়ে‌ছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলা‌দেশ বি‌নির্মা‌ণে আরও বৃহৎ প‌রিস‌রে কাজ করার ই‌চ্ছে আ‌ছে। সা‌থে বাংলা‌দে‌শের জনসংখ্যার অ‌র্ধেক নারী এবং সমা‌জে তারা সু‌বিধা ব‌ঞ্চিত। তাই নারী নেতৃত্ব গ‌ড়ে তোলাসহ সকল স্তরের জনগ‌ণের উন্নয়‌নে মানু‌ষের জন্য কাজ করার মান‌সে ম‌নোনয়ন প্রত্যাশায় ফরম জমা দি‌য়ে‌ছি।

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মনোয়ারা আক্তার জাহান পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘ ১৪ বছর রাঙ্গামাটি পৌরসভার নির্বাচিত কমিশনার ছিলাম, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রী যাকে এমপি নির্বাচিত করবেন, তাকেই আমরা মেনে নেব। তিনি যদি আমাকে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করেন তাহলে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা দিয়ে উনার সিদ্ধান্তের মান রক্ষা করব।

উল্লেখ্য, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দলীয় মনোনয়ন বোর্ড যাদের নাম চূড়ান্ত করবেন তারা নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুয়ায়ী ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। এর পর আগামী ১৪ মার্চ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে তাদের। অবশ্য সংরক্ষিত নারী আসনে সাধারণত নিজেদের প্রাপ্য আসনগুলোয় একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয় দল বা জোটগুলো। ফলে এখানে ভোটের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষে একক প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে। তফসিল অনুসারে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সীমা ২৫ ফেব্রুয়ারি। সেটি হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন