খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ উৎযাপিত

S 01

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বনাঢ়্য আয়োজনে মং সার্কেলে ঐতিহ্যবাহী রাজস্ব আদায় উৎসব রাজপূণ্যাহ শনিবার উদযাপিত হয়েছে। দিনব্যাপী এ কর্মসুচী সকাল ১১টায় মং সার্কেলের রাজবাড়ি থেকে রাজসিপাহীর একটি চৌকষ দল মং রাজা কে গার্ড অভ অনার দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মং সার্কেলের অষ্টম রাজা দক্ষিণ এশিয়ার কনিষ্ঠতম রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী’র কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পরে হেডম্যান কার্বারীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেন রাজা।

অষ্টম রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী সভাপতিত্বে ৫ম রাজ পূণ্যাহই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন খাগড়াছড়ির সংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন-পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা, জেলা প্রশাসক এর এডিসি-মোজাম্মেল হক, ইউএনডিপি ও সিএইচটিডিএফের ইম্লিমেন্টশন অফিসার এজেন্ট রবাট স্টলম্যান্ট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন,খাগড়াছড়ি রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত জি-২ আই মেজর মঈন, জোন কমান্ডার আলী রেজা,হেডম্যান এসোসিয়েশন সহ-সভাপতি সুইলাপ্রু চৌধুরীসহ উর্দ্ধতন সরকারী কর্মকর্তা রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের প্রজারা উপস্থিত ছিলেন ।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের পক্ষ থেকে ১শ ফাউন্ডের কেক ও ফলের ঝুড়ি রাজাকে উপহার দেন। এর পর সকল সম্প্রদায়ের যৌথ আয়োজনে রাজার সম্মানার্থে নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজিত রাজ পুন্যাহ অনুষ্ঠানে বক্তব্যে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত সুপার জয়নুল আবেদীন বলেন, পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে যে উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে তা বজায় থাকলে পাহাড়ে স্থায়ী শাস্তি সম্ভব।
রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেন, পাহাড়ী জনগোষ্ঠির কৃষ্টি সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রেখে পাহাড়ে বসবাস করে যাচ্ছে। পাহাড়ী জনপদে আজো উপজাতীরা বঞ্চিত। তাই সকলের সহযোগিতায় সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।   

S 06

অনুষ্ঠানে হেডম্যান এসোসিয়েশন সহ-সভাপতি সুইলাপ্রু চৌধুরী বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আইন সমূহ,প্রথার সংজ্ঞা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের প্রথার গুরুত্বপূর্ন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান সমূহের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন,করার বিষয়ে সকল হেডম্যান-কারবারীদের আরো সচেতন করে তুলতে প্রশিক্ষন ও বেতন ভাতা সহ বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরেন।

রাজবাড়ীতে এ উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ী-বাঙ্গালীসহ সকল সম্প্রদায়ের লোকজনদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিনত হয়। মারমা,চাকমা,ত্রিপুরা এবং ব্ঙাগালী,মুসলিম-হিন্দু-বড়–য়া ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।  
এ রাজ পুণ্যায় ৮৮ জন হেডম্যান ও ৪শ জন কার্বারী অনুষ্ঠানে খাজনা পরিশোধ করতে যোগ দেন। রাজা সাচিংপ্র“ চৌধুরীকে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে জুম খাজনা ও নজরানা প্রদান করে। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রত্যেক মৌজা প্রধান (হেডম্যান) ৫’শত টাকা এবং প্রত্যেক পাড়া প্রধান (কার্ব্বারী) ৩’শত টাকা করে রাজ দরবারে রাজাকে রাজস্ব বা নজরানা প্রদান করেন।

 রাজ পুন্যাহ্ হচ্ছে মূলত- পাহাড়ে পার্বত্যবাসীদের খাজনা (রাজস্ব) আদায়ী উৎসব। এ দিন গ্রাম প্রধান হেডম্যান-কারবারীসহ প্রজারা রীতি অনুযায়ী তাদের রাজার সম্মানার্থে খাজনা দিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজাকে রাজ পোশাক পরিয়ে গার্ড অব অর্নার প্রদানে মাধ্যমে রাজবাড়ী থেকে সৈন্য-সেনারা রাজাকে মঞ্চে আসেন। খাগড়াছড়িতে মোট ১২১ জন মৌজা প্রধান (হেডম্যান) ও ১২শ জন গ্রাম্য কার্ব্বারী রয়েছে বলে জানা গেছে।
    উল্লেখ যে,সর্বশেষ ২০০৬ সালে রাজ পিতা প্রয়াত পাইহ্লাপ্র“ চৌধুরী সময়ে প্রথম রাজ পূণ্যাহ শুরু হয়। তাছাড়া ১৯৬৯ সালে একবার ধারাবাহিক সর্বশেষ রাজ পূণ্যাহ হয়েছিল। তার আগে তৎকালীন ১৮৮৩ সালে কংজধবইং রাজার আমলে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকৃতি স্বরুপ তলোয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রথম সাধারন প্রজাদের কাছ থেকে জুম চাষের একরের প্রতি ৬ টাকা খাজনা  আদায় করে  রাজ পূণ্যাহ উৎসব পালন করে আসছিল। কি›তু মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গুরুত্বপুর্ন কাগজ পত্র খোঁয়া যাওয়ায় এটি কততম রাজ পূণ্যাহ তা বলা যাচ্ছে না।

এ অনুষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার তিন সার্কেলের রাঙ্গামাটি চাকমা সার্কেল, বান্দরবান বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়ি মং সার্কেল অধিভূক্ত। খাগড়াছড়ি জেলার ৮ উপজেলা সদর, মাটিরাংগা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি, পানছড়ি, মহালছড়ি, দীঘিনালা অর্ন্তভক্ত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন