অটোরিকশা চালকের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

খাগড়াছড়িতে যাত্রীর ফেলে যাওয়া ৮ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন অটোরিকশা চালক

fec-image

যাত্রীর ফেলে যাওয়া ৮ লাখ টাকার ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন অটোরিকশা চালক শাহরিয়ার খান ওরফে উল্লাস। এমন বিরল ঘটনাটি ঘটেছে খাগড়াছড়িতে। টাকা ভর্তি ব্যাগ ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অটোরিকশা চালক শাহরিয়ার উল্লাস প্রশাংসায় ভাসছেন।

খাগড়াছড়ি শহরের শব্দ মিয়া পাড়ার বাসিন্দা আবুল কাশেমের ছেলে শাহরিয়ার খান ওরফে উল্লাস। অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। উল্লাস জানান, বুধবার(২৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে খাগড়াছড়ির নারিকেলবাগান এলাকা থেকে এক যাত্রী তার গাড়িতে ওঠেন। জেলার ন্যান্সিবাজার দীঘিনালা স্ট্যান্ডে ওই যাত্রীকে নামিয়ে দেন। পরে যাত্রী নিয়ে খাগড়াছড়ি বাজারে চলে যান। বাজারে এসে যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর ব্যাগটি শাহরিয়া উল্লাসের চোখে পড়ে। তিনি বুঝতে পারেন, ন্যান্সি বাজার স্ট্যান্ডে নেমে যাওয়া যাত্রী বাকি সব জিনিস নিলেও ব্যাগটি ফেলে গেছেন। এ সময় কৌতূহলবশত ব্যাগটি খুললে বিপুল পরিমাণে টাকাগুলো দেখতে পাই। এর পরপরই ব্যাগের মালিকের সন্ধানে ন্যান্সি বাজার স্টেশনে ছুটে যাই।‘স্টেশনে গিয়ে সবার কাছে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। পরে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ব্যাগের বিষয়টি জানানো হলে তাঁরাই বিটু চাকমার সন্ধান দেন। বিটু চাকমা চট্টগ্রাম আরআরএফএ কর্মরত পুলিশ সদস্য বিটু চাকমা।

চট্টগ্রাম আরআরএফ পুলিশের এআসআই বিটু চাকমা বলেন, তিনি চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ফিরছিলেন। বাড়ি করার জন্য সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) থেকে টাকাগুলো ঋণ নিয়েছেন তিনি। অটোরিকশা থেকে নামার ১০ মিনিট পর তাঁর খেয়াল হয়, তিনি টাকার ব্যাগটি অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন। এ সময় স্ট্যান্ডে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি জানান। তারা তাকে খাগড়াছড়ি সদর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁদের পরামর্শে থানায় গেলে সেখানে অবস্থান করার সময় খবর আসে, অটোরিকশাচালক তাকে খুঁজছেন।

বিটু চাকমা বলেন, ‘অটোরিকশাচালক শাহরিয়ারের সততা ভুলতে পারব না। তাঁকে খুশি করে কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলাম, তিনি নেননি। এক কাপ চা–ও তাঁকে খাওয়াতে পারিনি। টাকাগুলো না পেলে শেষ বয়সে বাড়ি করার ইচ্ছাটা আর পূরণ করতে পারতাম না।’

শাহরিয়ার খান ওরফে উল্লাসের বাবা বলেন, তার ছেলে ব্যাগ পেয়ে যাত্রীর কাছে ফিরিয়ে দিতে ন্যান্সি বাজারে যান। অন্যের সম্পদের দিকে লোভ না করতে বাবার দেয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। তার এমন মহৎ উদ্যোগে গর্বিত বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।

খাগড়াছড়ি শহরের ন্যান্সি বাজারের সিএনসি স্ট্যান্ডে ব্যাগ ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অটোরিকশা চালকের সততাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিকশিত হলে অপরাধ অনেকাংশ হ্রাস পাবে। আর মূল্যবান কোন কিছু নিয়ে চলাচলের সময় প্রয়োজনে স্থানীয় পুলিশ ইউনিট থেকে সেবা গ্রহণের পরামর্শ পুলিশ সুপারের।

খাগড়াছড়ির শাহরিয়ার উল্লাসদের মতো মানবিক ও মহৎ মানুষে ভরে উঠুক পৃথিবী এমন প্রত্যাশা সকলের।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন