খাগড়াছড়িতে শত শত পূণ্যার্থীর অংশগ্রহণে কঠিন চীবর দানোৎসব

fec-image

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ি সদরস্থ খবংপড়িয়া বড়শীলতুক আর্য্যধাম বৌদ্ধ মহাশ্মশান বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২৩-২৪ নভেম্বর) দুইদিনব্যাপী ১০ম দানোত্তম কঠিন চীবর দান’র আয়োজন করেন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কবিরাজ বৈদ্যঃ অংচিংনু মারমা।

বৃহস্পতিবার সারারাত উপাসিকারা তুলা থেকে সুতা তৈরি এবং সেই সুতা থেকে চীবর বানানো হয়। যাকে বেইন বুনন বলা হয়ে থাকে। আজ শুক্রবার ভিক্ষুদের সেটি দান করেন তারা। এদিন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দূর দূরান্ত থেকে হাজারো পূণ্যার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

এ সময় পূণ্যার্থীরা পঞ্চশীল গ্রহণ, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার দান, কল্পতরুদান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ডু দানসহ নানাবিধ দান করে ও ধর্ম দেশনা শ্রবণ করে। এ ছাড়াও বিশ্ব শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। পরে দ্বিতীয় পর্বে বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিস্কার দান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি করা কঠিন চীবরটি দান করেন বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারা।

এ অনুষ্ঠানে জেমিন চাকমা ও কোহি চাকমা’র সঞ্চালনায় সমবেত পূণ্যার্থীর উদ্দেশ্যে ধর্মদেশনা প্রদান করেন খবং দশবল বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ অগ্রজ্যোতি মহাথের, দক্ষিণ খবং পড়িয়া আদর্শ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ও বড়শীলতুক আর্য্যধাম বৌদ্ধ মহাশ্মশান বুদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ নন্দপ্রিয় মহাথের, ক্ষান্তিপুর অরণ্য কুটিরের অধ্যক্ষ আর্য্যবোধি মহাস্থবির, আলুটিলা আন্তর্জাতিক ভাবনা কেন্দ্র’র অধ্যক্ষ করুণাদ্বীপ স্থবির, বদানালা সাধনা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধশ্রী ভিক্ষু।

প্রাঙ্গণে কঠিন চীবর নিয়ে বিহার প্রদক্ষিণ করে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্যে চীবর দান করে। সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় হাজার বাতি ও উড়ানো হয় ফানুস ।

বেইন বুননের ব্যাপারে অনিলা দেবী চাকমা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর তৈরি করে তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দানের মাধ্যমে পূণ্য সঞ্চয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এমন বিশ্বাস থেকে বৌদ্ধ শাস্ত্রে এই দানকে শ্রেষ্ঠ দান বলা হয়।

পুলক জীবন চাকমা বলেন, ধর্মীয় শাস্ত্রমতে এ শ্রেষ্ঠ দানে মানুষের পাশাপাশি অবুঝ বন্য প্রাণী হাতিও পূণ্যকর্মে অংশগ্রহণ করে থাকে ।

সুমিত্রা চাকমা বলেন, দীর্ঘ ৩ মাস বর্ষাবাসের পরে মাসব্যাপী বিভিন্ন বিহারে বিহারে একবার প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি আমাদের শ্রেষ্ঠ দানোৎসব।

বড়শীলতুক আর্য্যধাম বৌদ্ধ মহাশ্মশান বুদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ নন্দপ্রিয় মহাথের বলেন, কঠিন চীবর দান হচ্ছে আমাদের বৌদ্ধদের ধর্মীয় ও জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ভাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনের মনোভাব জাগ্রত হয়।

পৌর কমিশনার অতীশ চাকমা বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নানান আয়োজনে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের দান, উৎসর্গের মধ্যদিয়ে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে শত শত বৌদ্ধ উপাসক ও উপাসিকারা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কঠিন চীবর দানোৎসব, খাগড়াছড়ি, পূণ্যার্থী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন