খাগড়াছড়িতে হামলা-হাতাহাতি ও বয়কটের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগের কর্মী সম্মেলনে সম্পন্ন

06.09.2013_Khagrachari AL Boykot News Pic

মুজিবুর রহমান ভুইয়া, খাগড়াছড়ি থেকে :

খাগড়াছড়িতে হামলা-হাতাহাতি ও সম্মেলন বয়কটের মধ্য দিয়ে শুক্রবার খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের পুর্বনির্ধারিত কর্মী সম্মেলন শেষ হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মী সম্মেলনে তৃণমুল নেতাকর্মীদের বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি এবং ধস্তাধস্তির এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সময় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ সভামঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন।

কেন্দ্র ঘোষিত এই কর্মী সম্মেলনে যুবলীগ-ছাত্রলীগের কিছু ত্যাগী নেতা বক্তব্য দিতে না পারায় বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা থেকে আগত তৃনমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে হঠাৎ করে উত্তেজনা দেখা দিলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

এ সময় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিক্ষুদ্ধ ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা মঞ্চের দিকে যেতে চাইলে দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি প্রভাবশালী চক্রের সংঘবদ্ধ হামলায় মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মো: রেজাউল করিম গুরুতর আহত হয়ে মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ আহত আওয়ামীলীগ নেতা মো: রেজাউল করিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হামলায় বাবুল ও স্বপন নামের আরো ২ আ’লীগ কর্মী আহত হয়। বর্তমানে আহত আওয়ামীলীগ নেতা মো: রেজাউল করিম খাগড়াছড়ি জেলা সদও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

উত্তেজিত যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতা-হাতিতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী নিজেই হতভম্ভ হয়ে পড়েন এবং মঞ্চে উপস্থিত অতিথিরা মঞ্চ থেকে নেমে নীচে আসেন। এসময় আতঙ্কিত নেতাকর্মীরা দ্রুত হল ত্যাগ করে।

এদিকে এই ঘটনার জের ধরে সভাস্থল খাগড়াছড়ি টাউন হলের সামনের সড়কে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা পুলিশের সামনে দুই দফায় দীঘিনালা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মো: আলমগীর এবং পানছড়ি যুবলীগ নেতা আবদুল মোমিনের ওপর ফিল্মী ষ্টাইলে হামলা করা হয়।

এদিকে কর্মীসম্মেলনে বক্তব্য দিতে না দেয়ায় মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামছুল হকের নেতৃত্বে মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সম্মেলন বয়কট করে। এসময় অন্যান্য উপজেলার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের পথ অনুসরন করে সম্মেলন বয়কট করে।

সম্মেলন বয়কটের কথা স্বীকার করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো: এমরান হোসেন পার্বত্য নিউজকে বলেন, যেখানে তৃনমুল কর্মীদের বক্তব্য শোনার কথা সেখানে তাদেরকে উপেক্ষা করা হয়েছে। নিজেদের গত সাড়ে চার বছরের অপকর্ম ঢাকতে জেলার নেতারা তৃনমুল কর্মীদের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা তাদের চাটুকারীতাকে সমর্থন করিনা বলেই একযোগে সম্মেলন বয়কট করেছি। আর এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারও।

পরে সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্মেলনস্থল টাউন হলে এসে তৃণমূল নেতাকর্মীদেরকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে তারা কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাননি। দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা হাতে গোনা কিছু লোক সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আঙ্গূল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। আজকের সমাবেশের নাম কর্মী সমাবেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও  আমাদের কোন কর্মীকে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি।

সভায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাদারন সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম তাঁর বক্তব্যে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য দু:খপ্রকাশ করেন এবং প্রয়োজনে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিরও ঘোষণা দেন।

কর্মী সমাবেশে দলের জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ের কোন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলনা বলে আওয়ামীলীগ সুত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে কর্মীবিহীন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্তিতিতে সাড়ে চার বছর পর অনুষ্ঠিত কর্মীসমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলা সদরে এখনো মৃদু উত্তেজনা বিরাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন