খাগড়াছড়িতে ২৯টি অবৈধ ইট ভাটায় জ্বলছে কাঠ : হুমকির মুখে পরিবেশ
বিশেষ প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়িতে ২৯টি অবৈধ ইট ভাটায় জ্বলছে কাঠ। হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। ইট ভাটাগুলোতে যেন কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। ইট ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া।দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
অন্যদিকে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহৃত হওয়ায় উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে নির্বিকার জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই সাথে অনুমোদন না থাকায় ভাটাগুলো থেকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় এবারের মৌসুমে সক্রিয় ইটভাটার সংখ্যা ২৯টি। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ৫টি, মাটিরাঙ্গায় ৯টি, রামগড়ে ৫টি, দীঘিনালায় ৩টি, মহালছড়িতে ৩টি, গুইমারায় ২টি এবং পানছড়িতে ২টি ভাটায় ইট তৈরীর কাজ চলছে।
ইট ভাটার চাহিদা মেটাতে কোথাও ফসলি জমির মাটি কেটে, আবার কোথাও কোথাও পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইট পোড়াতেও কাটা হচ্ছে সংরক্ষিত এবং ব্যাক্তি মালিকানাধীন বনাঞ্চলের গাছ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্বালানি সাশ্রয়ী, উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন (হাইব্রিড হফম্যান কিলন, জিগজ্যাগ কিলন, ভারটিক্যাল স্যাফ্ট ব্রিক কিলন অথবা টানেল কিলন পদ্ধতিতে ইটভাটা প্রস্তুতির নিদের্শনা থাকলেও খাগড়াছড়ি জেলার কোন ভাটা মালিক তা মানছেন না।
বিভিন্ন ইট ভাটা ঘুরে দেখা গেছে, সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি মাধ্যমে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট।২৯টি ইটভাটার মধ্যে ১৭টিতেই ব্যবহার করা হচ্ছে সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্বালানী হিসেবে কয়লার ব্যবহার করার কথা থাকলেও আইনের কোন তোয়াক্কাই করছে না ইট ভাটার মালিকরা।
ইটভাটার সামনে কিছু পরিমাণ কয়লা মজুদ করে রাখলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছেনা। মূলত সংরক্ষিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন বনাঞ্চলের কাঠ পুড়িয়েই তৈরি হচ্ছে ইট। আর এসব দেখেও কার্যত নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই সাথে অনুমোদন না থাকায় ভাটাগুলো থেকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) মো: মাসুদ করিম বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় ইটভাটা গুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই ও ইটভাটা গুলো সম্পূর্ণ অবৈধ।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘মাটির উপরের অংশ হচ্ছে জমির প্রাণ। বিভিন্ন ফলন উৎপাদন হয় জমির উপরের উর্বর অংশ থেকে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জমির উপরের অংশটুকু ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য কেটে নেয়া হচ্ছে এবং পাহাড়ও কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। এছাড়া ইট তৈরির জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ধ্বংস হচ্ছে সবুজ বনায়ন। ফলে পাহাড়ের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছরের ২৩ নভেম্বর জেলার পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভায় ইটভাটা সংক্রান্ত সভায় ২০১৭ সালে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা করা হবে মর্মে অঙ্গীকার করেছে ইটভাটার মালিকরা। সেই সাপেক্ষে জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে এ বছর অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি জেলার ব্রিক ফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, শর্ত সাপেক্ষে এই বছরের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ১৭ টি সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি অনুমতি নিয়েছি। আগামী বছর থেকে ১৭ টিতে “ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩”এর সকল বিধি অনুসরণ করা হবে।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোমিনুর রশীদ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মাটিরাঙ্গা ও রামগড় উপজেলায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু কাঠ জব্দ করেছি । পর্যায় ক্রমে জেলার সবগুলো ইটভাটায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ বনায়ন ও পরিবেশ রক্ষায় এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের।