খাগড়াছড়িতে ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে বৈসাবি উৎসব

kkkiuy

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

পাহাড়ের প্রাণের উৎসব ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু বা বৈ-সা-বি উৎসব’কে ঘিরে খাগড়াছড়ি জেলার প্রতিটি জনপদ এখন উৎসবের জোয়ারে ভাসছে। আগামী ১২ এপ্রিল নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মূল উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার চারদিন আগে ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে বৈসাবী উৎসব।

ইতোমধ্যে গ্রাম থেকে গ্রামে পুরোদমে চলছে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নানা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি। এ উৎসবকে ঘিরে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান আনন্দ র‌্যালি, মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার ফেস্টিবল বা পানি উৎসব এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গড়িয়া নৃত্যের আয়োজন থাকবে। বিপণি বিতান গুলোতে এখন পাহাড়ীদের পাশাপাশি বাঙ্গালী তরুণীদেরও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বৈসাবী উৎসবকে প্রানবন্ত করতে তিনদিনের বর্নাঢ্য কর্মসুচী গ্রহণ করেছে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিউট। নানা কর্মসুচীর মাধ্যমে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য সবার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিউট‘র উপ-পরিচালক সুসময় চাকমা জানান, ৮ এপ্রিল থেকে এ কর্মসূচির শুরু হবে। একই দিন উদ্বোধন করা হবে পাঁচ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার।

এদিকে সার্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি খাগড়াছড়িতে এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসুচীর মধ্যে ১২ এপ্রিল ভোরে চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানো, একই দিন সকাল ৯টায় ফুল বিজুর দিন বৈসাবি‘র বর্ণাঢ্য র‌্যালি এবং র‌্যালি শেষে উপজেলা মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব শেষে থাকবে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ওয়াটার ফেস্টিবল বা পানি উৎসব এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গড়িয়া নৃত্য।

১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় নতুন বছরের সুখ-শান্তি কামনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হবে। এছাড়াও ১৩-১৬ এপ্রিল চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমাদের বৈ-সা-বি (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু) উৎসব পালিত হবে স্বাড়ম্বরে।

১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈ-সা-বি’ নামে এ উৎসব পালন করা হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ‘বৈসাবি’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু’ নামে এ উৎসবটি পালন হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্টদের মতে অনুকুল আবহাওয়া থাকলে এবছর খাগড়াছড়িতে এবার উৎসব মুখর পরিবেশে বৈ-সা-বি পালিত হবে।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও ‘বৈসাবি’ উৎসবকে আরও আনন্দমখুর করতে তিন পার্বত্য জেলায় তিন দিনের ছুটি ঘোষণার দাবী করেছে অনেকেইে। বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ী জনপদে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরও সুদৃঢ় হোক, এমন স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন