খালি পেটে লিচু: ভারত ও বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর কারণ

lychee

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের বিহারে দুইবছর আগে মৌসুমী ফল লিচু খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩৯০ টি শিশু। তার মধ্যে ১২২ জনই মারা গিয়েছিল। গবেষকরা এখন বলছেন, খালিপেটে লিচু খাওয়ার ফলেই তাদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।

লিচু মৌসুমী ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হলেও, ভারত ও বাংলাদেশে কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানচেট’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।

খালি পেটে অনেকগুলি লিচু খেয়ে ফেললে শরীরে যে বিষ তৈরি হয়, তার ফলেই সুস্থ-সবল শিশুদের হঠাৎ খিঁচুনি আর বমি শুরু হয়। তারপরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে তারা। আর এভাবে আক্রান্ত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।

বিহারে ‘লিচু রোগ’ বা বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ‘অজানা কীটনাশকের প্রয়োগ’কেই এসব শিশুমৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হতো এতদিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে মৃত্যুর কারণটা লুকিয়ে থেকেছে ‘লিচু’ ফলের মধ্যেই।

লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিহারের ঘটনায় বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে দেখে এ সিদ্ধান্তে এসেছেন যে ওই বাচ্চাগুলি আগের রাতে খাবার খায় নি অথবা কম খেয়েছিল। পরের দিন রাস্তায় পরে থাকা, নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা অপরিপক্ব লিচু একসঙ্গে অনেকগুলি খেয়ে ফেলেছিল তারা। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাগুলি।

মে থেকে জুলাই মাসেই লিচুর ফলন হয়ে থাকে। আর ওই সময়েই শিশুরা ওই উপসর্গ নিয়ে মারাও যায় সবথেকে বেশী।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু বা লিচুজাতীয় ফল খেয়েই যে বিষক্রিয়ায় বহু শিশু মারা যায়, সেটা অনেক দিন আগেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গবেষণায় জানা গিয়েছিল।

এরপর ‘জামাইকান ভমিটিং সিকনেস’ নামের ওই রোগটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ভারত ও বাংলাদেশ সহ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে পৌঁছাতে অনেক দেরী হয়েছে, বলছে ‘ল্যানচেট’।

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন