খুনিয়াপালংয়ে অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা: ঘাতক স্বামী আটক

fec-image

কক্সবাজারের রামুতে ৪ মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী কহিনুর আক্তার (৩০) কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। হত্যা করে ঘরের শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন স্বামী মো. আয়াছ মিয়া ও তার ভাইসহ অপরাপর আসামীরা। এঘটনায় ঘাতক স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।

১৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় রামুর খুনিয়াপালং ২নং ওয়ার্ডের কেচুবনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন কহিনুর আক্তারের ভাই মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে রামু থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং: ১১, তারিখ: ১৪.০৪.২০২০, জিআর নং-১৩৩।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, বিগত ১৩ বছর পূর্বে রামু খুনিয়াপালং ২নং ওয়ার্ডের কেচুবনিয়া এলাকার আলম সওদাগরের ছেলে মো. আয়াছ মিয়ার সাথে মহেশখালীর হোয়ানক ৯নং ওয়ার্ড বারঘর পাড়া পানিরছড়া এলাকার গোলাম কাদের এর মেয়ে কহিনুর আক্তার (৩০) এর ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয়। বিবাহের পরে তাদের সংসারে ২টি মেয়ে ও ১টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বিবাহের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে কহিনুরকে পারিবারিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। এতে কহিনুর সংসার জিবনের উন্নতির কথা চিন্তা করে নিজেই গরু, ছাগল ও মোরগীর ফার্ম করে করে। উক্ত লালন পালনকৃত একটি ষাঁড় গরু ৩/৪ দিন পূর্বে মরিচ্যাপালং কসাইয়ের নিকট স্বামী ও তার ভাই মিলে বিক্রয় করে দেয়।

এরপর পালনকৃত গরু বিক্রির টাকার হিসাব চাইলে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী আয়াছ মিয়া তার তিন ভাই আয়ুব আলী ভুট্টু, সাহাব উদ্দিন, মাহবুব আলম ও মো. সুলতানের ছেলে আব্বাস হত্যার উদ্দেশ্যে কহিনুরের মাথার পেছনে ডান অংশে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে ঘরের শয়ন কক্ষে রশি দিয়ে ঝুঁলিয়ে রাখে। ঘটনার পর কহিনুর আক্তারের মহেশখালী বাবার বাড়িতে ফোন করে জানাই কহিনুর রাতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। এরপর মহেশখালী থেকে করোনা ভাইরাসের বিধি নিষেধের কারনে দ্রুত আসতে না পেরে কহিনুর এর পিতা ও ভাই স্বামী আয়াছ ও আত্বীয় স্বজনকে চিকিৎসা করতে বলে।

এরপর এলাকার লোকজনের কাছ থেকে হত্যা করার খবর পেয়ে মহেশখালীর হোয়ানক থেকে খুনিয়াপালং শশুড় বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় কহিনুর মৃত অবস্থায় ঝুলে আছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত ১৪ এপ্রিল রাতে হঠাৎ করে স্বামী আয়াছ স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ঝগড়া-ঝাটি করে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে মাটিতে পা লাগিয়ে ও হাত মাথার উপরে রেখে তরিঘড়ি করে ঘরে তীরের সাথে ঝুলিয়ে রাখেন। তবে স্ত্রী কহিনুর আক্তারের গর্ভে ৪ মাসের সন্তান ছিল। কহিনুরের মাথার পেছনে ও বাম চুয়ালে ব্যাপক জখম দেখতে পাই।

মামলার বাদি মো. আজিজুল হক বলেন, ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মাবুদ ও সাবেক মেম্বার লিয়াকত আলীসহ অন্যান্য লোকদের আসামীরা আমার বোনকে হত্যার পর আমার বোনের নিজ বসত ঘরে শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখে স্থানীয় প্রতিপক্ষ শত্রুরা আমার বোনকে হত্যা করেছে বলে সকলের নিকট বলাবলি করে। এরপর আমার বোনকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে সাবেক মেম্বার লিয়াকত আলী ও অন্যান্য লোকের সহায়তায় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিচে নামিয়ে দেখতে পায় আমার বোন মুত্যুবরণ করেছে।

পরবর্তীতে রামু থানার পুলিশ খবর পেয়ে আমার বোনের স্বামীর বাড়ীতে হাজির হয়ে কহিনুর আক্তার এর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী মো. আয়াছ মিয়া (৩৫), তার ভাই আয়ুব আলী ভুট্টু (২৬), সাহাব উদ্দিন (২২), মাহবুব আলম (২০) ও একই এলাকার মো. সুলতানের ছেলে আব্বাস (২৩) কে আসামি করে রামু থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর রামু থানা পুলিশ ঘাতক মো. আয়াছ মিয়াকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করে। বর্তমানে কহিনুর এর বাপের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মা হারা দুই বোনের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

রামু থানার ওসি তদন্ত রুমেল বড়ুয়া জানান, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে ইতিমধ্যে ঘাতক স্বামীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আটক, শ্বাসরোধ করে হত্যা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন