গুইমারাতে বিদেশী অস্ত্র ও ২৮ রাউন্ড গুলিসহ ৫ জন আটক( ভিডিওসহ)

fec-image

তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ভাড়াটিয়া কিলিং মিশন সদস্যরা খাগড়াছড়ি আসছিল দাবী ওয়াদুদ ভুঁইয়ার

গুইমারা

স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি ॥

খাগড়াছড়ি’র গুইমারাতে অস্ত্র ও গুলিসহ কিলিং মিশনের ৫ সদস্য’কে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার জালিয়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে সেনা, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা যৌথ তল্লাসি চালিয়ে তাদের আটক করেছে।

 

আটককৃতরা হলেন, মোঃ শহিদুর এ রহমান (৩৪), পিতা : মোঃ আব্দুর রহমান মন্ডল, মোঃ কামরুজ্জামান (৩৬), পিতা মোঃ আব্দুল হাকিম, মোঃ মেহেদী হাসান (৪৩), পিতা মৃত শামসুল হক, মোঃ গোলাম মাওলা মজুমদার (৪৪), পিতা মোঃ আমান উল্লাহ মজুমদার, মোঃ আজাদ হোসেন (৩০) পিতাঃ হাবিবুর রহমান। তাদের তিনজন ঢাকা ও দুইজন ফেনী এলাকার বাসিন্দা বলে জানাগেছে।

জানা যায়, সোমবার রাতে মোটর সাইকেলে পুলিশের নেমপ্লেট লাগিয়ে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি’র রামগড়ে আসে আটককৃতরা। মঙ্গলবার সারাদিন রামগড় থাকার পর বিকেলে তারা চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় গেলে ২৬ আনসার ও ২৯ আনসার ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ও রফিকুজ্জামান গাড়িতে পুলিশের ষ্টিকার দেখে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেকে পুলিশের ডিবি পরিচয় দিয়ে পুনরায় রামগড়ে বেক করার চেষ্টা করে। তাদের গতিবিধি কিছুটা সন্দেহজনক মনে হলে গোয়েন্দা সদস্যরা গুইমারা রিজিয়নে সংবাদ দিলে জালিয়াপাড়ায় বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা, সেনা, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা যৌথ তল্লাসি চালিয়ে তাদের আটক করে।

arms recovery

এ সময় তাদের কাছ থেকে ইউ.এস এর তৈরি SMIT WELTION 1801.  মডেলের টু পয়েন্ট টু একটি রিবালভার ও ৬টি গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের থানায় নিয়ে দেহ তল্লাসী করে আরও ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানান, তারা রামগড়ে এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে আসে। সেখান থেকে তারা পাহাড় দেখার উদ্ধেশ্যে গুইমারাতে আসে। তাদের সাথে রাখা অস্ত্রটি মোঃ শহিদুর এ রহমান নামে লাইসেন্স করা। তার বাবা সাবেক ইনকাম টেক্স অফিসার ছিলেন।

অস্ত্রটি লাইসেন্স করা উল্লেখ করে পুলিশ সূত্র জানায়, লাইসেন্স করা হলেও নির্দিষ্ট এলাকার বাহিরে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করা ও একজনের অস্ত্র অন্যের বহন করার কোন নিয়ম নাই। এছাড়াও তাদের মোটর সাইকেলে পুলিশের ষ্টিকার লাগানো থাকলেও তারা কেউই পুলিশের সদস্য নয়। ধারণা করা হচ্ছে তারা বড় কোন মিশন নিয়ে পাহাড়ে আসে।

গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ মিয়া জানান, আটককৃতদের ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এবিষয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি অভিযোগ করেছে, জেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুইয়া দীর্ঘদিন নানা বাঁধা উপেক্ষা করে বর্তমানে তার নির্বাচনী এলাকা খাগড়াছড়িতে অবস্থান করায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ওয়াদুদ ভুইয়াকে ঠেকিয়ে রাখতে না পেরে ভাড়াটিয়া কিলার দিয়ে ওয়াদুদ ভুইয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের আমদানী করেছে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতে ওয়াদুদ ভুইয়ার ফেইসবুক আইডি (Wadud Bhuiyan Cht)তে দেয়া ষ্ট্যাটাসে তিনি অভিযোগ করেছেন, এই পেশাদার কিলাররা ভাড়ায় খাগড়াছড়ি আসছিল আমাকে হত্যা করার জন্য। কারণ, আমি গত চার দিন থেকে প্রশাসনিক ও সরকারদলীয় নানা বাঁধা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন পর আমার নির্বাচনী এলাকা খাগড়াছড়িতে অবস্থান করছি। যা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারছে না। তারা দীর্ঘদিন আমাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারলেও, এইবার আমাকে আটকাতে না পেরে হিংস্র হয়ে উঠেছে। তাই তারা বেছে নেয় এই হায়নার রাস্তা এবং আমাকে হত্যা করতেই ভাড়াটিয়া কিলার আমদানি করে। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আটক হয়ে যায় কিলার গ্রুপটি।

ষ্ট্যাটাসে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এবারই প্রথম নয়। এর আগে আমি যখন কারাগার থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়ে ২০০৯ সালের ২৪ মে খাগড়াছড়িতে আসা মাত্র একাধিক সন্ত্রাসী মিলে হত্যা উদ্দেশ্যে আমার উপর গুলি বর্ষণ করে। সেবারও আল্লাহর রহমতে আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। সেবার সেই অস্ত্রধারী খুনে বাহিনী ছিল স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।

কিন্তু এবার তারা নিজেদের পরিকল্পনা আরও নিখুঁতভাবে সম্পাদন করার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে পেশাদার খুনী ভাড়া করে। কিন্তু এবার আরও আগেই ধরা পড়ে তারা।

ষ্ট্যাটাসে তিনি আশংকা করেন, কিলারদের প্রকৃত মোটিভ ও উদ্দেশ্য গোপন করে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং তাদের রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন