ঘূর্ণিঝড় হামুন: সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীকে সতর্ক করে মাইকিং

fec-image

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীকে ঘূর্নিঝড় হামুন সম্পর্কে সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফে ইতোমধ্যে ৬নং বিপদ সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল সোমবার সকল পর্যটকদের দ্বীপ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটক স্বেচ্ছায় রয়ে গেছেন।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে গতকাল থেকে আকাশ মেঘলা রয়েছে। থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ভ্যাপসা গরম আর হালকা বাতাস বইছে।
নৌযানগুলো নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাব এখনো দ্বীপে পড়েনি। জনগণকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রতিদিনের মতো সেন্টমার্টিনের অভ্যন্তরে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সাগর উত্তাল রয়েছে। বড় বড় ঢেউ কিনারায় আঁচড়ে পড়ছে।
এদিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া উপকুলেও মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের গত সোমবারে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তবুও প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটক দ্বীপে রয়ে গেছেন। মঙ্গলবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী।

মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় ( ১৯.৭° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৭° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ) অবস্থান করছে । এটি আজ (২৪ অক্টোবর ) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল । এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর নাগাদ ভোলার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অতিক্রম করতে পারে ।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে । প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে । পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার ) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে । কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার ) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে । মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে ।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে ।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মি.মি. ) থেকে অতিডারি ( ২৮৯ মি.মি. ) বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে । প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে । অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে । উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন