ঘূর্ণিঝড় হামুন: খোলা আকাশের নিচে পেকুয়ার হাজারও পরিবার

fec-image

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের আধা ঘণ্টার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কক্সাবাজারের পেকুয়া উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়ন। সম্পন্ন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজারের অধিক ঘরবাড়ি। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন এসব পরিবারগুলো। এছাড়া রয়েছে খাবার সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব।

এদিকে ৪ দিন পরের উপজেলায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

পেকুয়া সদরের বাংলাপাড়া, নন্দিরপাড়া, হরিণাফাঁড়ি, গোয়াখালী, সিরাদিয়া, বটতলিয়া পাড়া, দিয়া পাড়াসহ উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে কাঁচাঘর ভেঙে গেছে। কারো কারো টিনের চালা উড়ে গেছে। পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিয়ে বসবাস করছেন তারা। কারো কারো ঘরে অল্প খাদ্য থাকলেও বেশিরভাগেরই ঘরে খাদ্যের অভাব হয়ে পড়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে পরিবারের অনেক শিশু। ঘরবাড়ি খোলা আকাশের নিচে রেখে চিকিৎসার জন্যও যেতে পারছেনা বাড়ির কর্তারা।

এদিকে সদর ইউপি চেয়ারম্যান এম বাহাদুর শাহের নির্দেশে ইউপি সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এমন করুণ ও মানবিক চিত্র দেখা যায় ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ৬শত ঘরবাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত ও ৮শত ঘরবাড়ি মাঝারি ক্ষতিগ্রস্ত বলে এই পর্যন্ত খবর পেয়েছি। আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে তালিকা প্রস্তুত করছি। ইতোমধ্যে সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া ১৮ টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ শুরু করেছি।

খোলা আকাশের নিচে বাস করা পেকুয়া সদর টেকপাড়ার বাসিন্দা বিধবা রেহেনা বেগম, সালাউদ্দিন, মগনামার শরতঘোনার নুর মুহাম্মদ ও জসিম উদ্দিন পৃথক পৃথকভাবে জানান, ঘুর্ণিঝড় শুরু হওয়ার ৫ মিনিটের ভিতর প্রচন্ড বাতাসে আমাদের ঘর-বাড়ি উপড়ে নিয়ে যায়। এমনিতেই গত বন্যার পর আমরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি। তার মাঝেই এ ঘূর্ণিঝড়ে সব নিয়ে গেলো। এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।

এখনও পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তারা জানান, এক লোক এসে তালিকা করে গেছে তবে ত্রাণ পায়নি।

এদিকে মগনামা ও উজানটিয়ায় সরকারি পর্যায়ে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দীর্ঘ সারির মাঝে অল্প সংখ্যক মানুষ চাল পাচ্ছে এমন তথ্যও উঠে এসেছে।

মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে মগনামা ইউনিয়নে ১২১টি বসতঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, ৩৯২টি ঘর আংশিক ভেঙে গেছে তার ইউনিয়নে ত্রাণ সরকারি বিতরণ অব্যাহত আছে।

পেকুয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম দিপংকর জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পেকুয়ায় মেইন লাইনের ৫৭টি খুটি সহ মোট ১২৭টি বৈদ্যুতিক খুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাইন সচল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে সীতাকুণ্ড পল্লী বিদ্যুৎ ইউনিটের লোকজন।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, এই পর্যন্ত পেকুয়ায় ১৮ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে ত্রাণের পর্যাপ্তের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। আশা করি পেকুয়ায় খাদ্যের সংকট থাকবে না। এছাড়াও তালিকার মাধ্যমে খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী লোকজনের মাঝে টিন বরাদ্দ দেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন