চকরিয়ায় আ’লীগ ও যুবলীগ নেতার বাড়িতে  স্বশস্ত্র হামলা ভাংচুর: অর্ধশত রাউন্ড গুলি বর্ষণ

chakaria-pic-19-9-16-copy

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার আলম ও পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেলের বসতবাড়িতে স্বশস্ত্র হামলা ও ভাংচুর করেছে একই দলের স্বশস্ত্র বাহিনী। এ দুইনেতার বসত ঘরে ব্যাপক লুপাটেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি নেতারা।

সোমবার পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের সবুজবাগ এলাকায় দু‘দফায় এ  রোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। হামলা ও লুপাটের সময় অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষন করেছে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উপজেলা আ‘লীগ নেতা সরওয়ার আলম জরুরী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, চকরিয়া পৌরশহরের সবুজবাগ এলাকায় ২০০৮ সালে ৫ শতক জমি ক্রয় করে বসতঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছেন। ওই বাড়িতে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যার জাফর আলমের ভাতিজা পৌর কাউন্সিলর জিয়াবুল হকের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একদল সশস্ত্র বাহিনী অবৈধ অস্ত্র উঁচিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়। তার ৪টি ভাড়াবাসায় থাকা  লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসা থেকে বের করে দেয়। এসময় তারা বেপরোয়া ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। হামলায় ভাড়াটিয়া খতিজা বেগম (৩৫) ও হামিদা বেগম (৪০) ছররাগুলিতে আহত হয়েছে। তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সরওয়ার আলম আরো অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ এক ঘন্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে প্রত্যেক ভাড়াটিয়া বাসায় লুটপাট চালিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নেয়। ভাড়া বাসার লোকজনকে রক্ষা করার চেষ্টা করায় পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেলের বসতবাড়িতেও হামলা ও লুটরাজ চালায় সন্ত্রাসীরা।

সরওয়ার আলম আরও জানান, ঘটনা চলাকালীন থানার ওসি জহিরুল ইসলামকে একাধিকবার মোবাইলে জানানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। পরে মোবাইল রিসিভ করে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন ওসি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোক্তার আহমদ চৌধুরী, ফাঁসিয়াখালী ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন ।

এ দিকে বিকেল ৪টার দিকে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেন পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সরওয়ার আলমের মালিকানাধীন ভাড়া বাসায় উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমের নেতৃত্বে হামলা চালার সময় বাঁধা দেওয়ায় তার বসতবাড়িতে বৃষ্টিরমত গুলিবর্ষণ ও ভাংচুর চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এছাড়া সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

সোহেল আরও জানান, তিনি কেবলমাত্র ঘটনা ও উত্তেজনা নিবৃত করার চেষ্টা করায় জাফর আলম উল্টো তার বাড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা ও লুটপাট করেন। সন্ত্রাসীদের হামলায় আজিজুল ইসলাম সোহেলকে বেদম প্রহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। হামলার সময় তার বাড়ি থেকে ১টি এলইডি টিভি, ২টি মোটর সাইকেল, ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার সহ নগদ ৮ লাখ ৪৭ হাজার নগদ টাকা লুটে নেয় সন্ত্রাসীরা।

এছাড়াও বাড়ির ৩০টি থাইগ্লাস ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এতে তার ২০লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেন।

অপরদিকে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়, এ অভিযোগ প্রতিহিংসা ও উদ্দ্যেশ্য প্রসূত। মূলত: জাহেদা বেগম নামে এক অসহায় মহিলার ক্রয়সূত্রে মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল উচ্ছেদে সহযোগিতা করা হয়েছে। তার পক্ষে গত ৩১জুলাই’১৬ইং উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃংখলা ও সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে এবং থানার ওসিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ সরওয়ার আলম ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসহায় মহিলার জমি জবর দখলে রেখেছে। এছাড়াও অসহায় মহিলা জাহেদা বেগম পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সরওয়ার আলম উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবী করলেও তিনি (জাফর আলম) বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নামে কোন ব্যক্তি নাই। প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে সমস্যা সমাধানের জন্য ছুটে যাই। এখানে নতুন করে জবর দখল কিংবা গোলাগুলির কোন ঘটনা ঘটেনি

 যুবলীগ নেতা সোহেল বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে যুবলীগকে শাষিত করার ক্ষমতা তার রয়েছে। কেউ কোন অন্যায় করে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান জানান, এটি দলীয় অভ্যন্তরীন বিষয়কে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে থানার একদল পুলিশ পাঠানো হয়। তদন্ত করে দেখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। তবে ঘটনার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আদালতের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন