চকরিয়ায় গরু চুরি’র অপরাধে মা-মেয়েসহ ৫ জনকে দু’দফায় নির্মম নির্যাতন এবং জেল হাজতে প্রেরণ

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মা ও তার দুই মেয়ে  এবং এক ছেলেসহ ৫ জনকে ‘গরু চোর’ আখ্যা দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে তাদের কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। পরে তাদেরকে গরু চুরির মামলায় আসামি করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

সেখানে চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম নিজে তাদের ফের মারধর করেন। একপর্যায়ে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে।

নির্মম নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা হলেন, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট কুসুমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৫৫), মেয়ে সেলিনা আক্তার (২৮), মেয়ে রোজিনা আক্তার (২৫), ছেলে মোহাম্মদ আরমান (৩০) ও পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ ছুট্টু (৩৮)।

শুক্রবার(২১ আগস্ট) দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।

পরে এ ঘটনায় উপজেলার পহরচাঁদা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহমুদুল হক বাদী হয়ে ওই নির্যাতিত ৫ জনকে আসামি করে চকরিয়া থানায় গরু চুরি মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলায় থানা পুলিশ আহতদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেলে স্থানীয়রা ফাঁড়িতে খবর দিলে আমাদের ফোর্স দিয়ে গুরুতর অবস্থায় মা-মেয়েসহ ৫ জনকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসি। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের উপর নির্যাতন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের উদ্ধার করে। তবে মারধরের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।

এদিকে, ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, একদফা মা-মেয়ে ও ছেলের ওপর নির্যাতন চালানোর পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরাননুল ইসলাম চৌকিদার পাঠিয়ে তাদেরকে রশিতে বেঁধে তার কার্যালয়ে এনে আবার নির্মমভাবে নির্যাতন করেন।

পরে চেয়ারম্যানের লোকেরাই হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করে পুলিশ এনে তাদের হাতে মা-মেয়েসহ ৫ জনকে তুলে দেয়।

হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মা-মেয়েসহ ৫ জনকে হাত-পা খোলা অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে।

মারধরে আহতদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গরুর মালিক পহরচাঁদা গ্রামের অব. শিক্ষক মাহমুদুল হক বাদী হয়ে ওই ৫ জনের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ এনে একটি মামলা রুজু করেন।

ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চকরিয়া, জেল, হারবাং
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন