চকরিয়ায় ভূঁয়া জাতীয়তা সনদে ২৮ বছর ধরে বহাল তরবিয়তে স্বাস্থ্য পরিদর্শক

চকরিয়া প্রতিনিধি:

জেলার বাসিন্দা না হয়েও তথ্য গোপন করে রতন কুমার দাশ নামে বহিরাগত একব্যক্তি চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরি করে যাচ্ছে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে। এমনকি ভূয়া জাতীয়তা সনদে ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় বহাল তরবিয়তে চাকুরি করে স্বাস্থ্য সহকারি পদ থেকে তিনি বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে পদোন্নতিও পেয়েছেন।

জানা যায়, সর্বশেষ এ বছরের ২৯ মে কিছু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশির্বাদের কারণে তিনি স্বাস্থ্য পরিদর্শক চকরিয়ার ইনচার্জের দায়িত্বটিও পেয়ে যান।  এদিকে রতন কুমার দাশ ইনচার্জের দায়িত্ব পাওয়াতে চকরিয়ায় কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী,সহকারী স্বাস্থ্য পারদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক সহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগে জানা যায়, স্বাস্থ্য পরিদর্শক রতন কুমার দাশের নিজ বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার ৫নং সরোয়াতলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের(সাবেক ৩নং ওয়ার্ড)কঞ্জুরী গ্রামে। সে ওই গ্রামের আশ্বনী বৈদ্য বাড়ীর মৃত নির্মল দাশের ছেলে। রতন কুমার দাশের ভোটার নং-১৬৩০, হলেও তিনি প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দার ভূয়া জাতীয়তা সনদ দাখিল করে ১৯৮৮ সালে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সহকারি পদে যোগদান করেন। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে তথ্য গোপন করে দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এবং স্থায়ী বাসিন্দার কোটা লঙ্ঘনসহ সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে সরকারি চাকুরি নিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি পদোন্নতিও পেয়েছেন। সে অবৈধ নিয়োগ পাওয়ার কারণে জেলার অন্য একজন স্থায়ী বাসিন্দা চাকুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি তিনি জেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের মৌলিক অধিকার হরণ করে সরকারের আইনের পরিপন্থি কাজ করেছে অনেকের অভিমত।

অথচ সরকারী নিয়ম মতে তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ চাকরি করলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু রতন কুমার দাশ দীর্ঘ ২৮বছর ধরে বহাল তরবিয়তে চাকরি করে গেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তিনি ওই পদে আসীন হয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তার অধিনস্থ কর্মচারীদের প্রতি অশালিন আচরণ করে থাকেন। মাঠ পর্যায়ে অধিকাংশ স্বাস্থ্য সহকারি সুনামের সহিত কাজ করলেও অনেক সময় ওই পরিদর্শক টাকার জন্য তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ ফার্মেসীতে বিক্রি করে দেন। এসব কারণে তাকে কর্তৃপক্ষ টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলিও করলেও একবছর পূর্বে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পূনরায় চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরে আসেন। এতে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেও তিনি কাউকে পাত্তা দেন না।

আরও অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার জন সিনিয়র স্বাস্থ্য পরির্দশক রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই চারজনকে ডিঙ্গিয়ে কিভাবে তিনি গত ২৮ মে চকরিয়ার ইনচার্জের দায়িত্ব পেলেন এ প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের মুখে মুখে। ভূয়া জাতীয়তা সনদে চাকুরি পাওয়া অতপর ইনচার্জের দায়িত্ব নেওয়া রতন দাশের উপর চরম ভাবে ক্ষুব্দ হয়েছে উপজেলায় কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারি,সহকারি স্বাস্থ্যপরিদর্শক,স্বাস্থ্যপরিদর্শক ও হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তার বিরুদ্বে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তিনি লক্ষারচর উইয়িনের স্থায়ী বাসিন্দার সনদ নিলে ও ১৯৮৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত এ ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় তার কোন নাম নেই। কোন জায়গাজমি ও স্থায়ী বাড়ীঘর নেই।ভাড়া বাসাতেই অবস্থান করেন।

লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের সাবেক ২ জন ও বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার জানান, রতন কুমার দাশ কোন সময় আমাদের ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলনা।তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে দেখাগেছে সে ১৯৮০ সালে পূর্নচন্দ্রসেন সরোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় হতে মানবিক শাখা হতে ৩য় বিভাগেএসএসসি পাশ করেন। সরোয়াতলী ইউনিয়নের ভোটার লিস্ট ও শিক্ষা সনদ তদন্ত করলে সে কোন জায়গার স্থায়ী বাসিন্দা তা বেরিয়ে আসবে। চাকুরির শুরু থেকে এখনো সরোয়াতলী ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় তার নাম বিদ্যামান রয়েছে।কিছুদিন পূর্বে রতন দাশের বাবা নির্মল দাশ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলে ছেলে রতন দাশ দৈনিক পূর্বকোন পত্রিকায় মৃত্যু সংবাদ ও বিবৃতি দিয়েছেন বোয়ালখালীর বাসিন্দা হিসেবে।

সে অবৈধভাবে চাকরি করার অপরাধে পাঁচ বছর পূর্বে পশ্চিম বড়ভেওলা এলাকার সরওয়ার আলম নামের একব্যক্তি বাদি হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি বেশকিছু জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ফেলে রতন দাশ। যার কারনে প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে। ইতোপূর্বে চাকরি বঞ্চিত চকরিয়ার একাধিক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা: পুচনু এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি এবং এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা: আবদুস সালাম জানান, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে অভিযুক্ত রতন কুমার দাশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন