চিরঞ্জয় ও পূর্ণ হত্যাকাণ্ড দুই পরিবারের আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের: কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি

 Khagrachari Pic 06 copy

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি জেলার সদর থানাধীন নুনছড়ি থলিপাড়া এলাকায় চিরঞ্জয় ও পূর্ণ হত্যার ঘটনাকে দুই দুই পরিবারের আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের বলে দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার কারণে এ মর্মান্তিক  ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে রঙ দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত এবং বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য খাগড়াছড়ি জেলার আপামর জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানান।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বিবৃতিতে বলেন, চিরঞ্জয় ত্রিপুরা(৫০) ও কালিবন্ধু ত্রিপুরা(৫০) পরস্পর সম্পর্কে ভগ্নিপতি/শ্যালক এবং একই উঠানে বাড়ি। প্রায় ৪ বছর পূর্বে এলাকায় একটি ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এছাড়া গত ২ বছর পূর্বে আবার কালিবন্ধু ত্রিপুরা ও চিরঞ্জয় ত্রিপুরা নিজেদের আধিপত্য নিয়ে উভয়ে উভয়ের ঘরবাড়ি ভাংচুরসহ এক ভয়ানক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে কালিবন্ধুসহ পিতাপুত্র ৩জন হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়। পরে থানায় উভয়ে উভয়ের মধ্যে  মামলা হয়। যা এলাকার বর্তমানে জীবিত অনেক জনপ্রতিনিধি সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনেকবার সামাজিকভাবে মীমাংসার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল।

বিগত ইউপি নির্বাচনে কালিবন্ধুর বিপক্ষে চিরঞ্জয় ত্রিপুরা নির্বাচনী প্রচারনা করলেও নির্বাচনে কালিবন্ধু ত্রিপুরা ইউপি সদস্য পদে নির্বাচিত হয়। গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখ কালিবন্ধু ত্রিপুরা ও তার ছেলে যত্ন বিকাশ ত্রিপুরা অস্ত্রসহ আটক হয়। এ বিষয়টি চিরঞ্জয় ত্রিপুরার মদদে সংঘটিত হয় মর্মে কালিবন্ধু ত্রিপুরা সন্দেহ করে এবং দুই পক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য আরও প্রকট আকার ধারন করে।

৭ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিঃ খাগড়াছড়ি সদর থানাধীন মাছের বাজারের ফার্মেসির গলিতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন চিরঞ্জয় ত্রিপুরাকে মারধর করলে চিরঞ্জয় ত্রিপুরা বিজ্ঞ আদালতে কালিবন্ধু ত্রিপুরাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। মামলা দায়ের করার ও পূর্বের ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১১ এপ্রিল ২০১৭ খ্রি. সন্ধ্যা রাতে চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও তার পরিবারসহ খাওয়া-দাওয়া করার সময় কালিবন্ধু ত্রিপুরা, তার পুত্র রচন ত্রিপুরা ও প্রদীপ ত্রিপুরাসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫জন চিরঞ্জয় ত্রিপুরার বসত বাড়িতে প্রবেশ করে বসত ঘর ও দোকানপাট ভাংচুর করে এবং চিরঞ্জয় ত্রিপুরা, তার স্ত্রী ববি লক্ষী ত্রিপুরা, ছেলে কর্ণজ্যোতি ত্রিপুরা, পুত্রবধু বিজলী ত্রিপুরা ও নিহার কান্তি ত্রিপুরাদেরকে লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট করলে চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ঘটনাস্থলে মারা যায়। কর্ণজ্যোতি ত্রিপুরা,ববি লক্ষী ত্রিপুরা ও বিজলী ত্রিপুরাকে চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্ণজ্যোতি ত্রিপুরাকে মৃত ঘোষণা করেন। ববি লক্ষী ত্রিপুরা ও বিজলী ত্রিপুরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার কারনে ওই ঘটনা ঘটেছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে রঙ মাখিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত এবং বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।

এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এবং নিরীহ লোকজন যাতে প্রশাসনের হয়রানীর শিকার না হয় সেজন্য প্রশাসনের  নিকট অনুরোধ করা হলো। জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য সকল স্তরের নেতা-কর্মীকে ধৈর্য্য এবং সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য খাগড়াছড়ি জেলার আপামর জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে সাংবাদিকদের তাদের লেখালেখির মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে প্রকৃত সত্য তুলে ধরবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যাশা করে বলেন, আওয়ামী পরিবারের মধ্যে কোন বিভেদ থাকতে পারেনা। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করার লক্ষ্যে সকলকে একযোগে এবং একসাথে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে জেলা সদরের থলিপাড়া এলাকায় কালিবন্ধু ত্রিপুরা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর  হামলায় ব্যবসায়ী চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও তার ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরা নিহত এবং চিরঞ্জয় ত্রিপুরার স্ত্রী ভবেলক্ষী ত্রিপুরা ও ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরার স্ত্রী বিজলি ত্রিপুরা গুরুতর আহত হন। সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও তার ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরা প্রথমে গুলি ও পরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় চিরঞ্জয় ত্রিপুরার স্ত্রী ভবেলক্ষী ত্রিপুরা ও ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরার স্ত্রী নারী কার্বারী বিজলি ত্রিপুরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। তারা এখন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহত চিরঞ্জয় ত্রিপুরার ছেলে নিহার ত্রিপুরা বাদী হয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য খোবনেশ্বর ত্রিপুরাসহ অন্তত অর্ধশত জনকে আসামী করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা হয়েছে। ( মামলা নং ৪, তারিখ,১২.০৫.২০১৭)। পুলিশ শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে ব্রত ত্রিপুরা নামে মামলার এক আসামীকে আটক করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন