জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবায় হিমশিম খাচ্ছে নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

fec-image

পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে উন্নীত হয়নি। চিকিৎসা সেবাই যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। নানান সংকট নিয়ে উপর্যুপরি জরুরি চিকিৎসা সেবায় হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অপর আরেক রোগী নাইক্ষ‌্যংছড়ি সদর ইউপি এলাকার বাসিন্দা মৃত শরিফ হোসেনে’র পুত্র মো. ইসলাম (৫০) ভর্তি হয়েছিলে হার্টের সমস‌্যা নিয়ে, গত ২৮ তারিখ থেকে ২য় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসারত । চিকিৎসক সংকটের দরুন,চিকিৎসা সেবা নিতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে উপজেলা বাসীকে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। সংকট উত্তরণে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সাংসদ সদস্য বীর বাহাদুর আশু সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন উপজেলা বাসী। যাতে দ্রুত সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বাসীর কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা গ্রহণে শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার জন্য।

এদিকে নাইক্ষ‌্যংছড়ি সদর ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মৃত সুলতান আহাম্মদের পুত্র আশরাফ আলী (৭০) পায়ের ব্যথা জনিত কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্সে। সময় তখন ৫ মার্চ দুপুর পৌনে একটা।কিন্তু দীর্ঘ সময় পার করে প্রায় ২ ঘণ্টা পর চিকিৎসা সেবা পান।এতো সময়ক্ষেপণের পিছনে দায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও অন‌্যান‌্য জনবল সংকট। উপজেলা বাসীর কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আশরাফ আলীর আত্মীয় এমরান উদ্দিন সবুজ জানান, যথা সময়ে চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়াতে পুরো উপজেলা বাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেকেই ভারাক্রান্ত কণ্ঠে পার্বত্য নিউজকে বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা মিললেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা মিলছেনা,মিলেনা ওষুধ পথ্য।ফলে নিরুপায় হয়ে রোগীর জন্য চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে লিখা ওষুধ বাইর থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে। শুধু মাত্র প্যারাসিটামল ও অমিডন ওষুধেই সীমাবদ্ধ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উপজেলা বাসীর কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবাই তিনজন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা, কিন্তু রয়েছে একজন।সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৮ জন থাকার কথা। আছে মাত্র ৪ জন।নার্সিং সুপারভাইজার নেই একজনও। ফার্মাসিস্ট পদ রয়েছে দু’টি, কিন্তু একজনও নেই। জুনিয়র কনসালটেন্টস ৪ জন থাকার কথা,আছে মাত্র একজন।ডেন্টাল সার্জন একজনও নাই। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৬ জন থাকার কথা, সেখানেও একজন সংকট।অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্সও নেই। হাসপাতালের জরুরি রোগীর সেবাই গাড়ি বরাদ্দ আছে, চালক নাই। নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রহরী দুইজনের স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন একজন। আয়া দুইজন থাকার কথা, ওই পদ একেবারে খালী।এমএলএসএস ৪ জনের স্থলে দুইজন দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ডে তিনজনের স্থলে দুইজন আছেন। পরিচ্ছন্নকর্মী ৫ জনের মধ্যে একজন নাই। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে জনবল সংকট নিয়ে চলছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে নিশ্চিত কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা বাসী।

নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্স’র উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক‌্যাল অফিসার সাইফুল ইসলাম খুরশেদ বলেন, আমি শুধু জরুরি বিভাগের দায়িত্বে আছি। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করি রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন‌্য।সরকার যে সমস্ত মেডিসিন আমাদেরকে দিচ্ছে, সব মেডিসিন দিয়ে আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি।

নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্সে’র কর্তব্যরত মেডিক‌্যাল অফিসার ডা. মুরাদ বলেন, মেডিকেল অফিসার ৩ জনের স্থলে তিনি একা যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।পাশাপাশি আবাসিক মেডিকেল অফিসারও সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

উপজেলা স্বাস্থ‌্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ছলিম পার্বত্য নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ জনবল সংকট দীর্ঘদিনের। ৫০ শয্যা হাসপাতালে সব মিলিয়ে ৩৬ জন চিকিৎসক স্টাফ থাকার কথা থাকলে আছে মাত্র ৩ জন। ২৫ জন নার্স থাকার কথা আছে মাত্র ৩ জন। এছাড়াও বিভিন্ন পদ খালী থাকলেও সেবার কার্যক্রম কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন