বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে ‘মৌলবাদী চরমপন্থী’ বললেন ত্রিপুরার রাজা


চরমপন্থা বা মৌলবাদের বিরুদ্ধে যখন দেশের সুশীল সমাজ ও প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি মাঠে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, ঠিক তখনই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মা বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামীকে ‘মৌলবাদী চরমপন্থী’ বলে আখ্যা দিলেন।
ভারতের এএনআই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের এই রাজা বলেন, ‘আমাদের ভারতের প্রতি বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধ মনোভাব আছে। তারা কুমিল্লায় মহারাজা বীরচন্দ্র লাইব্রেরি ভাংচুর করেছে। তারা ব্রিটিশ বিরোধী খাসি মুক্তিযোদ্ধা তিরোত সিংয়ের ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে। যিনি একজন খাসি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর সাথে আজকের বাংলাদেশ বা শেখ হাসিনার কী সম্পর্কে আছে, যে তারা তাঁর ভাস্কর্য ভাংচুর করল? তাদের মনোভাব সম্পূর্ণ ফান্ডামেন্টালিস্ট (মৌলবাদী)। আমাদের প্রতি তাদের ঘৃণার কারণ হলো বাংলাদেশে তাদের ক্রমবর্ধমান মৌলবাদী চরমপন্থা।’
শেখ হাসিনার পতনের পর কুমিল্লার মহারাজা বীরচন্দ্র লাইব্রেরি ভাংচুরে ত্রিপুরা রাজা তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। যা ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এদিন সেই পাঠাগারের আগের এবং পুড়ে যাওয়ার পরের দুটো ছবি পোস্ট করেন মানিক্য বংশের বর্তমান বংশধর প্রদ্যোত মানিক্য। সেই পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘গুণ্ডারা কুমিল্লার ১৩৫ বছর পুরোনো মহারাজা বীরচন্দ্র পাঠাগার পুড়িয়ে দিল। একই সঙ্গে পুড়িয়ে দিল সেখানে থাকা বই এবং অন্যান্য জরুরি নথি। এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে ওদের মনে আমাদের জন্য কত ভালোবাসা আছে।’
তিনি এদিন আরও লেখেন, ‘কিন্তু আমরা এটার কোনও প্রতিক্রিয়া জানাব না। তাহলে বাংলাদেশে থাকা আমাদের সংখ্যালঘুদের উপর ওরা আরও অত্যাচার করবে।’
একই দিনে হিন্দুস্তান টাইমস সহ ভারতের গণমাধ্যমে মহারাজা বীরচন্দ্রের লাইব্রেরি ভাংচুরের জন্য বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের দায়ী করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার কুমিল্লার সেই ১৩৫ বছর পুরোনো মহারাজা বীরচন্দ্র পাঠাগার পুড়িয়ে দিল ইসলামিস্টরা। প্রতিবাদের গর্জে উঠলেন ত্রিপুরার মুকুটহীন রাজা তথা মানিক্য বংশের বংশধর প্রদ্যোত মানিক্য।’
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ‘ঠোকো বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম বন্দর দখল করো’ শিরোনামে প্রদ্যোত মানিক্য দেব বর্মার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রচার করে এএনআই নিউজ। সাক্ষাৎকারে তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যজিৎ রায়সহ সকল ভাস্কর্য ও তাদের ঘরবাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য জামায়াত ইসলামীর ‘মৌলবাদী চরমপন্থা’কে দায়ী করেন ।
এএনআই নিউজকে ত্রিপুরা রাজা প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেব বর্মা বলেন, তারা তাদের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতার ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে। সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি ভাংচুর করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা, তাঁর বাড়ি, ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে।’
উৎস : হিন্দুস্তান টাইমস, এএনআইন নিউজকে দেয়া ত্রিপুরা রাজার সাক্ষাৎকার ( ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত)।