জীবন চলার সংগ্রামে পানছড়ির বয়ো:বৃদ্ধ মো: আলী

M ALI PIC (1)

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় আশি বছর বয়সেও জীবন চলার কঠিন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এক বয়ো:বৃদ্ধ। সে ৩নং সদর পানছড়ি ইউপির মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত আনসর আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী। নিজ এলাকায় সে আলী ভাণ্ডারী নামেই পরিচিত। বর্তমানে মোহাম্মদ আলীর বয়স ৮০। চোখে-মুখে তার বয়সের ছাপ পরিলক্ষিত হলেও জীবন চলার সংগ্রামে সে চালিয়ে যাচ্ছে কঠিন এক যুদ্ধ। হস্ত শিল্পের কারুকাজের বাহাদুরীতে বয়ো:বৃদ্ধ হয়েও ৫ সদস্যের সংসারের হাল আজো আলী ভাণ্ডারীর হাতেই।

মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পার্শ্বে একটি পরিত্যাক্ত ক্লাব ঘরে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়েই মোহাম্মদ আলীর সাজানো সংসার ও শৈল্পিক কারখানা। নিজের কোন ঘর-ভিটা-মাটি নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে সারা জীবন অন্যের বাড়িতে থেকেই আজ জীবনের অন্তিম লগ্নে।

সরেজমিনে মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দা’য়ের সুক্ষ আছড়ে দক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় বাঁশ কেটে টুকরো করে চিকন শলা তুলছেন আলী ভাণ্ডারী। আর সেই শলা দিয়ে হাতের আঙ্গুলের মারপ্যাচে ঝুড়ি বানিয়ে এক এক করে সাজিয়ে রাখছেন বিভিন্ন মডেলের ঝুড়ি। লিচু ও আম ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিচ্ছেন এসব ঝুড়ি। প্রতিটি ঝুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনটি ঝুড়ি বানাতে পারে বলে জানান। রোদ-বৃষ্টি কোন কিছুতেই থেমে থাকেনা তার শৈল্পিক কাজ। কারণ পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ থেকে শুরু করে পড়ালেখার খরচ পত্রাদি সবই এই কাজের উপর নির্ভর।

কথা হয় সংগ্রামী যোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ভাণ্ডারীর সাথে। সে জানায় স্ত্রী ছালেমা, মেয়ে আমেনা, রাবেয়া, মরিয়ম ও ছেলে আল-আমিনকে নিয়ে তার সাজানো সংসার। এর মাঝে বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন নিয়ে আমেনা ও রাবেয়ার বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে আল-আমিন ও ছোট মেয়ে মরিয়ম বর্তমানে বিদ্যালয় পড়ুয়া।

স্ত্রী ছালেমা সাত সকালে জঙ্গল থেকে কখনো লাকড়ি কেটে, কখনো কচু শাক তুলে বাজারে বিক্রি করে তবেই চুলোয় আগুন দেয়। রান্না-বান্না শেষ করেই স্বামীর কাজে যোগান দেয়। ছেলে আল-আমিন ও মেয়ে মরিয়মও কাজে সহায়তা দেয় বলে জানান।

৪র্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া রোকসানা জানান, আজো আমরা গাইড কিনতে পারি নাই। তাই পড়া-লেখায় এগুতে পারছিনা। মলিন সুরে মরিয়ম স্কুল ড্রেস কিনতে না পারার কথাও জানান। বর্তমানে আলী ভাণ্ডারী বিভিন্ন সমিতির প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামের কোন রেশন কার্ড নেই তবে বয়স্ক ভাতা হিসাবে ৩ মাস পর পর ১২০০ টাকা পান বলে তিনি জানান।

এলাকার সমাজ সেবক ও গুচ্ছগ্রাম চেয়ারম্যান ডা: মতিউর রহমান, আমির হোসেন, হাজেরা বেগমসহ অনেকেই জানান, আলী ভাণ্ডারী এলাকার একজন কর্মঠ ও সৎ ব্যক্তি। এই বয়সে হস্ত শিল্পের কাজ করে পরিবারের ভরণ-পোষণ, ছেলে-মেয়ের পড়া-লেখার খরচ, বিভিন্ন সমিতির লোন পরিশোধ করা আলী ভাণ্ডারী একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন