শুধু নৌ ঘাট থেকে তার মাসিক আয় ৬ লাখ টাকার বেশি

টেকনাফের বাহারছড়ায় তদন্ত কেন্দ্রে সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনের বেপরোয়া কর্মজীবন

fec-image

সরওয়ার কামাল (৪৫)। পেশায় টমটম চালক। ধারকর্য করে কিনেছিল টমটমট। চলতি করোনাকালে লকডাউন ঘোষণাকালে ৫০০ টাকার জন্য সামনের গ্লাসটি ভেঙ্গে পেলে পরিদর্শক লিয়াকত। শুধু গ্লাস ভেঙ্গে ক্ষান্ত হননি। আটকে রেখে ঠিকই পাঁচশত টাকা চাঁদা নিয়ে গাড়িটি ছেড়েছেন ওই ইননচার্জ।

অদ্যাবধি টাকার অভাবে গ্লাসটি লাগাতে পারেননি টমটম চালক সরওয়ার কামাল। এমনটি অভিযোগ তার নিজের। সরওয়ারের বাড়ি শামলাপুরেই।

শুধু তা নয়, প্রায় পেশাজীবী থেকে দৈনিক মাসিক চাঁদা আদায়, বিচারপ্রার্থীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজে বাহারছড়ার মানুষ অতিষ্ঠ। বিশেষ করে শামলাপুরবাসী।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লিয়াকত হোসেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতে টেকনাফ উপজেলার শামলাপুরস্থ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। তখন থেকে বেপরোয়া জীবন শুরু করেন তিনি।

বাহারছড়া ইউনিয়নটি সাগরতীরে অবস্থিত হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকার করে দিনাতিপাত করে যাচ্ছে। সেই সুবাধে বাহারছড়া ইউনিয়নে ১২ টির বেশি ঘাট রয়েছে। ঘাটগুলোর মধ্যে শামলাপুরে দুইটি, শীলখালী একটি, চৌকিদারপাড়া দু‘টি, বাইন্যাপাড়া একটি, জাহাজপুরা একটি, হাজমপাড়া একটি, নোয়াখালীতে একটি,কচ্ছপিয়া একটি অন্যতম।

প্রতি ঘাটে গড়ে ১‘শ করে নৌকা রয়েছে। এসব নৌকা ও মাছ ব্যবসায়ী থেকে দৈনিক ৫০০ করে অবৈধভাবে টাকা নিতো।

শুধুমাত্র ঘাটের নৌকা মৎস্য ব্যবসায়ী থেকে মাসে ৬ লাখ টাকা চাঁদা নিতো বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এসব টাকা না দিলে মাছ শিকার ও ব্যবসা বন্ধ করে দিতো হতো।

পাশাপাশি মাদক দিয়ে চালান করে দেওয়ার হুমকিও দিতেন তিনি। ক্রসফায়ার. মামলা-হামলার ভয়ে মুখ খুলতেন না কেউ। এসব টাকা তুলতো ক্যাশিয়ার নামে পরিচিত আব্দুল্লাহ আল মামুন।

ইনচার্জ লিয়াকত হোসেন ও কনস্টেবল ক্যাশিয়ারখ্যাত মামুনের মা-বোন তুলে গালমন্দ ও মাদকের মামলার ভয়ে নিরবে সহ্য করতো।

শামলাপুর দক্ষিণ ঘাটের সভাপতি বেলাল উদ্দিন মুঠোফোনে কিছু বলতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, আমরা প্রতি ঘাট থেকে ম্যাচের জন্য খরচ দিতাম।

উত্তরের সভাপতি সৈয়দুল ইসলাম মেম্বার বলেন, মুঠোফোনে তো এসব কথা বলা যায়না। তাদের হুমকি ধমকিতে ভয়ে ততস্থ হয়ে থাকতো। প্রতি ঘাটে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়ে গেলে শুরুতে মা বোন ধরে গালিগালাজ করতো। টাকা কম হওয়াতে এসব গালমন্দ শুনতে হতো বলে জানান সৈয়দুল। শামলাপুরকে সাবার করে ফেলেছে বলেও জানান তিনি।

কয়েকটি নৌকার মালিক রাশেদুল আলম জানান, তাদের মিলের জন্য মাছ দিয়ে আসতে হতো। আসলে এতো মাছ তাদের প্রয়োজন হতো না। মাছ সব জমা করে ক্যাশিয়ার মামুন এক দালাল ধরে বিক্রি করে ফেলতো।

শামলাপুর বাজারে ৩০ টির মত মাছের আরদ রয়েছে। এসব আরদে প্রতিদিন ৩০-৫০ জন ব্যবসায়ী মাছ কিনতে আসেন। এসব ছোট মাছ ব্যবসায়ী থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে চাঁদা নিতেন।

এসব চাঁদা না দিলে মাছের ভেতর ইয়াবা রয়েছে বলে মাছ রাস্তায় ছিটিয়ে দেওয়া‘সহ নানাভাবে হয়রানি করতেন। সেই সাথে ব্যবসায়ীদের ফাঁড়ী উঠিয়ে নিয়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হতো।

স্থানীয় আরদদার হেলাল উদ্দিন জানান ত্রিশ আরদে প্রতিদিন শত শত মাছ ব্যবাসায়ী মাছ কিনতে আসেন। প্রতি মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩‘শ থেকে ৫‘শ টাকা আদায় করতে ক্যাশিয়ার মামুন সরেজমিন এসে নিয়ে যেতেন।

টাকা দিতে সমস্যা হলে নানাভাবে হয়রানি করা হতো বলেও জানান তিনি।

শুধু তাই নয়! শামলাপুরে বেশ কিছু টমটম রয়েছে। এসব টমটম থেকেও ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেন।

এসবেও ক্ষান্ত ছিলেন না সালিশেও হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। তার চলাফেরা আচার ব্যাবহারে প্রায় সব পেশাজীবী শ্রেণী ক্ষুব্দ ছিলেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক প্রধান শিক্ষক বলেন তিনি ধরাকে সরা মনে করে ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতো। সাধারণ মানুষ ভয়ে তার ফাঁড়ীতে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য যেতেই সাহস পেতোনা।

এসব অবৈধ আয় ও তার বেপরোয়া কর্মজীবনের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পাশাপাশি একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হয়ে এমন বেপরোয়া জীবনে কোনো অফিসার যেনো না আসেন এমনই দাবি তাদের।

সরেজমিন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে গেলে আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অস্থায়ী ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ রয়েছে। তারা কোনো মুখ খুলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় যোগাযোগ করা হলে তদন্ত ওসি ও ভারপ্রাপ্ত এবিএস দোহা জানান, আমি করোনামুক্ত হয়ে মাত্রই এসেছি। তাছাড়া এসব বিষয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তরাই ভালো জানেন।

এ ব্যাপারে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দাকার গোলাম ফারুক ও কক্সবাজার জেলা পুলিশের অফিসিয়াল মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ওসি, টেকনাফ, বাহারছড়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন