টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ফরিদ উল্লাহ গ্রেপ্তার, অধরা ভাই এনায়েত

teknaf pic 24-6-16

টেকনাফ প্রতিনিধি :
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বরইতলী গ্রামে বসবাসকারী মিয়ানমারের নাগরিক নুরুল আলম ওরফে বিয়াই। তার দুই ছেলে ফরিদ উল্লাহ ও এনায়েত উল্লাহ। পেশায় ছিলেন দিনমজুর, করতেন নাফ নদীতে মাছ শিকার। যখন মিয়ানমার থেকে বানের স্রোতের মত ইয়াবা আসছে তখনি এ পথে পা বাড়ান পিতাসহ দুই পুত্র । পাশাপাশি এ ব্যবসার হাল ধরেন ফরিদ উল্লাহর স্ত্রী রশিদাসহ তার আত্মীয়-স্বজন। অল্পদিনের ব্যবধানে আলাদীনের চেরাগ পেয়ে তারা এখন কোটিপতি।

মিয়ানমারের বুলিংগা নামক এক ব্যক্তি জইল্ল্যারদ্বীপ (অর্থাৎ যেখান থেকে বিজিবির নায়েক রাজ্জাককে ধরে নিয়ে গিয়েছিল মিয়ানমারের বাহিনী) সে স্থান দিয়ে বুলিংগা ইয়াবা পাঠায়, আর তা গ্রহণ করেন পিতাসহ তার দুই পুত্র। আবার সেই ইয়াবা নিয়ে ঢুকে পড়েন তাদের বরইতলীর বসতঘরে না হয় ১৪ নম্বর ব্রীজ বা নাইট্যংপাড়া দিয়ে টেকনাফে। তারা জইল্ল্যারদ্বীপ এলাকায় মাছ শিকারের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা, মদ, বিয়ার, কারেন্ট জাল ও বাংলাদেশ থেকে  ভোজ্যতৈল, মোবাইল, ফেন্সিডিল, ইয়াবা তৈরীর সরঞ্জাম হিরোসন সহ নানান পণ্য পাচার কাজে।

এ পাচারকাজ অব্যহত রাখতে গিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত বাহিনীকে মাসিক মাসোয়ারা দিতে হয়। এমনকি মাসোয়ারা দিয়ে বিজিবির সর্বোচ্চ ইয়াবা ও চোরাচালান আটককারী হাবিলদার লুৎফর রহমানকে হত্যা করার মিশন নেয়। ব্যর্থ হয়ে জইল্ল্যারদ্বীপ এলাকায় লুৎফরের উপর হামলা চালায়। এঘটনায় লুৎফর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলে ফরিদ উল্লাহ ও এনায়েত উল্লাহর পিতা নুরুল আলম ওরফে বিয়াইকে আসামী করা হয়। এর প্রতিশোধ নিতে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীর সাথে চুক্তি করেন তারা। সেই ২০১৫ সালের ১৬ জুন রাতে বিজিবির হাবিলদার লুৎফর রহমান মনে করে বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাক ধরে নিয়ে গিয়ে ২৬ জুন মংডুতে ১০দিন পর ফেরত দেয়।

তাদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২১ জুন ৫৫২ বোতল মদসহ ফরিদ আলম  ও তার ভাই এনায়েত উল্লাহকে বাড়ি থেকে আটক করে টেকনাফ ৪২ বিজিবি, ফরিদ উল্লাহ গাঁজাসহ কুমিল্লায় আটক করে পুলিশ, ২০১৬ সালের ১২ মে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন নতুন পল্লানপাড়া থেকে ১,২০.০০০ হাজার পিস ইয়াবা আটকের ২১ নম্বর মামলায় ৬ নম্বর পলাতক আসামী ফরিদ উল্লাহ, তাদের চুক্তির বিনিময়ে ইয়াবা বহন করতে গিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ জুন ২ হাজার ইয়াবাসহ কক্সবাজার র‌্যাবের হাতে মনির আহম্মদ ও সৈয়দ নুর আটক হয়, ২০১৬সালের ৫ জুন ৩৯ হাজার ইয়াবাসহ আব্দুর রশিদকে চট্টগ্রাম পুলিশ আটক করে, ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ বিজিবির হাতে ৯৮৭৪ পিস ইয়াবাসহ ইসমাইল আটক, ২০১৫সালের ১৯ আগষ্ট সাড়ে ১৯ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফ পুলিশের হাতে লক্ষী রানী,  ২০১৫ সালের ২৭ এপ্রিল  ৫ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফ পুলিশের হাতে ম. সেলিম, ধুমপাড়াং এর মিয়ানমারের নাগরিক ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী  আবদুল হাফেজ ও মরিয়ম নামে এক দম্পত্ত্বি মাদকদ্রব্য হাতে গ্রেফতার হয়, বরইতলীর সিএনজি চালক আক্তার, ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী দেশীয় তৈরী অস্ত্র এবং ইয়াবাসহ  তার পার্টনার  টেকনাফ ইসলামাবাদ এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের পুত্র মো. হাশিমকে গ্রেফতার করে বিজিবি, সবর্শেষ কোস্টগার্ডের হাতে ২০১৬ সালের ১৭ জুন ৩২ হাজার তাদের ইয়াবা আটক হয়।

বর্তমানে তাদের রয়েছে এখন শতকোটি টাকার সম্পত্ত্বি । তম্মধ্যে দুইটি ট্রাক, দুইটি মিনি ট্টাক, একটি নোহা, ৩টি সিএনজি, তিনটি মোটরসাইকেল, স্বর্ণের বার, ব্যাংক বীমায় নগদ টাকা জমা,  নাফ নদীতে ট্রলারসহ জাল, সমুদ্র সৈকতে নৌকাসহ জাল, হ্নীলা, টেকনাফ সদরের নতুন পল্লানপাড়া, লেঙ্গুরবিল, তুলাতুলী, বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিনদ্বীপে কোটি কোটি টাকার জায়গা কিনেছেন এবং পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানেও কিনেছেন জমি।

২৪ জুন ভোর রাতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লানপাড়া থেকে টেকনাফ মডেল থানার ওসি আবদুল মজিদের নেতৃত্বে  পুলিশ তাকে আটক করে। ওসি আবদুল মজিদ জানান,  ২০১৬ সালের ১২ মার্চের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লানপাড়া থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা আটকের ঘটনায় ফরিদ উল্লাহ ৬ নম্বর পলাতক আসামী। এই ২১/২৪১ নম্বর মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে শুক্রবার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ফরিদ উল্লাহকে আটকের পর থেকে তার পিতা নুরুল আলম ওরফে বিয়াই ও ভাই এনায়েত উল্লাহ পলাতক রয়েছে এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন