টেকনাফে পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানা ও ডাকাতের আস্তানা থেকে অস্ত্রসহ আটক ৬

কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন রঙ্গীখালি এলাকার দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে মূলহোতা ফয়সাল’সহ ডাকাত চক্রের ৬ জনকে আটক করেছে র‌্যাব-১৫। এসময় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন-টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালীর গুরা মিয়ার ছেলে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল (৪০), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ার নজির আহম্মদের ছেলে মো. বদি আলম ওরফে বদাইয়া (৩৫), হ্নীলা ইউনিয়নের দক্ষিণ আলীখালীর জানে আলমের ছেলে মো. কবির আহাম্মদ (৪৩), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার বাছা মিয়ার ছেলে মো. সৈয়দ হোসেন (৩২), একই ইউনিয়নের পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার বনি আমিনের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসন (৩৫) ও হ্নীলা ইউনিয়নের উলুছামারি কুনারপাড়ার জাহিদ হোসেনের ছেলে মো. মিজানুর রহমান (২৬)।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, কক্সবাজারসহ টেকনাফ থেকে শুরু করে হ্নীলা অঞ্চলের যে গহীন পাহাড় এলাকা বিদ্যমান এখানে একাধিক ডাকাত চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে। সকল ডাকাত চক্র প্রতিনিয়ত এলাকাবাসী এবং অন্যান্য এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানিসহ খুন, অপহরণ ও ধর্ষণ জাতীয় অপরাধ সংঘটিত করে আসছে। র‌্যাব-১৫ শুরু থেকেই এ সকল ডাকাত দলের গতিবিধি এবং অবস্থান নজরদারিতে রেখেছে এবং ডাকাত চক্রকে ধরার জন্য তৎপরতা চালিয়ে আসছে।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিধানিক দল টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালি এলাকার গহীন পাহাড়ে অবস্থানরত একটি ডাকাত চক্রকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করে এবং ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় একটি অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কার করে। র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি টের পেলে ডাকাত দলের সদস্যরা র‌্যাবের আভিযানিক দলের উপরে গুলি বর্ষণ করে এবং এদিক-ওদিক দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় পালানোর সময় ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর মূলহোতা ফয়সালকে র‌্যাবের আভিযানিক দল আটক করতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ফয়সাল, ডাকাত দল চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের আভিযানিক দল টেকনাফের রঙ্গীখালির বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বদি, কবির, সৈয়দ হোসেন, দেলোয়ার এবং মিজানুরকে গ্রেফতার করা হয়। ডাকাত দলের তৈরিকৃত অস্ত্রের কারখানা থেকে ২টি একনলা বড় বন্দুক, ৪টি এলজি, ১টি অর্ধনির্মিত এলজি, ৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, ১টি ড্রিল মেশিন, ১টি আগুন জ্বালানো মেশিন, ২টি লেদ মেশিন, ২টি বাটাল, ১টি শান দেয়ার রেত, ২টি লোহার পাইপ, ২টি প্লাস, ১টি কুপি বাতি এবং ৩টি স্মার্ট ফোন উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রটি টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যা’সহ নানাবিধ অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ার সুবাদে সেখানে গড়ে তুলে অস্ত্র তৈরির কারখানা। গ্রেফতারকৃত ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে অন্যান্য সন্ত্রাসী চক্রের নিকট অস্ত্র সরবরাহ’সহ নিজেদের তৈরিকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে তৈরিকৃত আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত। গ্রেফতারকৃত ডাকাত চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে সশস্ত্র হামলার তথ্য পাওয়া যায়। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নানাবিধ অপরাধের পাশাপাশি ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্দি করে রাখতো এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়া হতো, চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতঃপূর্বে কয়েকজন ভিকটিমকে হত্যা পর্যন্ত করেছে বলে অপরাধীরা জানায়।

তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল একজন কুখ্যাত অস্ত্রাধারী ডাকাত দলের মূলহোতা। সে ফয়সাল বাহিনী নামে একটি ডাকাত দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। তার নেতৃত্বে রয়েছে টেকনাফের রঙ্গীখালি এলাকার দুর্গম পাহাড় গড়ে উঠে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানা। তার দলের সহযোগীদের নিয়ে সেখান থেকে টেকনাফ, উখিয়া ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে খুন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ডাকাতি ও দুস্যতা, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ৩টির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত মো. বদি আলম ওরফে বদাইয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ১৪টি, মো. কবির আহাম্মদের বিরুদ্ধে ২টি, মো. সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি, মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন