ডিজি, ডিসিসহ ৬ সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতের সমন: পেকুয়ায় ভূঁয়া সনদে সরকারী চাকুরীতে যোগদান

images_bg_656863946

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া :

পেকুয়ায় ভূয়া নাগরিক সনদে সরকারী চাকুরীতে যোগদানের ঘটনায় চাকুরীতে যোগদানকারী ডিজি, ডিসিসহ ৬ সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতের সমন জারি হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জানাযায়, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাইছড়ি ধনিয়াকাটা এলাকার মকবুল আলীর স্ত্রী শামীমুল জন্নাত বাদী হয়ে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের নাজির বাড়ীর জয়নাল আবেদীনের মেয়ে ঝিনু আক্তার টইটং ইউনিয়নের ভূয়া নাগরিক সনদ দিয়ে টইটং ইউনিয়নের ৩/ক ইউনিটে পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফ.ডাব্লিউ,এ) পদে যোগদানের অভিযোগে যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে সংশ্লিষ্ট ৬ সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। মামলা নং অপর ১১৪/২০১৪ ।

চাকুরীতে যোগদানকারী ঝিনু আক্তারসহ মামলার অন্যান্য বিবাদীরা হলো উপ-পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা কক্সবাজার ও সদস্য সচিব জেলা বাছাই/নিয়োগ কমিটি, পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগ, মহাপরিচালক পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ঢাকা, জেলা প্রশাসক ও সভাপতি বাছাই কমিটি/নিয়োগ কমিটি কক্সবাজার জেলা, পেকুয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট আদালতের ১০৩ নং স্মারকে আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৫ মে স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারবাকিয়ার নাজির বাড়ীর ঝিনু আক্তার টইটং ইউনিয়নের ভুয়া নাগরিক সেজে টইটং ইউনিয়নের নাগরিকের জন্যে বরাদ্দকৃত চাকুরীতে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর নিয়োগ পেয়েছেন, যার রোল নং ৩৬১০০৪১। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) কাজী মো. শফিউল আলম স্বক্ষরিত নিয়োগপত্র ঝিনু আক্তারের ভুয়া ঠিকানা ধনিয়াকাটা সোনাইছড়ি ডাক-টইটং হাজী বাজার, উপজেলা পেকুয়া, জেলা কক্সবাজার ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠানো হলে তিনি ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পেকুয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগদান করেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বারবাকিয়া ইউনিয়নের জন্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। ঝিনু আক্তার নিজের স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে টইটং ইউনিয়নের ভুয়া নাগরিক সেজে আবেদন করে সরকারী নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। বারবাকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদিউল আলম বলেন, ঝিনু আক্তার বাবা জয়নাল আবেদীন বারবাকিয়া নাজির বাড়ীর বাসিন্দা ১৭ নভেম্বর তার নামে ৩৫১০ নং জাতীয়তা সনদপত্র ইস্যূ করা হয়েছে। তিনি ওই নিয়োগ পরীক্ষার জন্যে ২০১৩ সালের ৫মে লিখিত আবেদন করলেও একই বছরের ২৮ অক্টোবরে তার নামে ভোটার আইডি কার্ড ইস্যূ করা হয়েছে। যা বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন রেজিষ্টার ০২ নং বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে। নিবন্ধন নং-১৯৯২২২১৫৬১১০০৫৩১৮। বারবাকিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে মহিলা ভোটার তালিকার ১৮৯ ক্রমিকে তার নামে ইস্যূকৃত জাতীয় পরিচয় পত্র ও ভোটার আইডি নং- ১৯৯২২২১৫৬১১০০০১০১। একই ওয়ার্ডে তার পিতা জয়নাল আবেদীনের পুরুষ ভোটার তালিকার ক্রমিক নং-৮৯ এতে তার ভোটার আইডি নং-২২০৬৬৫২৬০৪৭৭। তার মাতা মনোয়ারা বেগমের ভোটার আইডি নং-২২০৬৬৫২৬০৪৪১ যা মহিলা ক্রমিক নং-১০০।

এ ব্যাপারে টইটং ইউপির চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী হিসেবে টইটং ইউনিয়নের ৩/ক ইউনিটে নিয়োগ পাওয়া ঝিনু আক্তার বারবাকিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা, তার ইউনিয়নের বাসিন্দা নন। তার নামে তার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন প্রকার নাগরিক সনদপত্র বা অন্য কিছু তার জানামতে ইস্যূ করা হয়নি।

জানা যায়, গত বছরের ৬ এপ্রিল স্থানীয় একটি পত্রিকার মাধ্যমে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় পরিবার কল্যাণ সহকারী (মহিলা) পদে নিয়োগের জন্যে বিজ্ঞপ্তি আহবান করে। সে অনুযায়ী পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ৩/ক ইউনিটে পরিবার কল্যাণ সহকারী (মহিলা) নিয়োগের জন্যে এ ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা, আবাদিঘোনা, ভেলুয়া পাড়া, আবদুল্লাহ পাড়া, মৌলভীপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা এস.এস.সি পাস মহিলাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহবান করা হয়। জানা যায়, টইটং ইউনিয়নের ৩/ক ইউনিট থেকে ওই দুজন প্রার্থী আবেদন করেন। মামলার বাদী শামীমুল জান্নাত লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পায়।

তিনি অভিযোগ করেন, ভূয়া সনদ নিয়ে বিশাল অংকের ঘুষ দিয়ে ভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা ঝিনু আক্তার প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ নিয়েছেন। তিনি লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে মৌখিক পরীক্ষায় সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করেও নিয়োগ পাননি। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী মো. শফিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে চাকুরী প্রার্থী এক মহিলা অভিযোগ দিয়েছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

আদালতে মামলায় সমনের বিষয়ে জানতে চইলে তিনি আর কিছুই না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিধান কান্তি রুদ্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয় নিয়ে কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন