তাইন্দং সহিংসতা পরিদর্শনে আসা প্রতিনিধি দল রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন পাহাড়ী নেতাদের সাথে

19.08.2013_Taindong

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি :

মাটিরাঙ্গার তাইন্দং সহিংসতার ১৭ দিনের মাথায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ঢাকা থেকে আসা প্রতিনিধি দলটি আজ সোমবার তাইন্দংয়ের ক্ষতিগ্রস্থ বগাপাড়া ও সর্বেশ্বরপাড়া পরিদর্শন করেন। সকাল সোয়া নয়টার দিকে মাটিরাঙ্গা থেকে রওনা দিয়ে বেলা পৌনে এগারটার দিকে প্রতিনিধি দলটি ঘটনাস্থলে পৌছায়।

ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী কল্যাণ সমিতির ব্যবস্থাপনায় আসা এ দলটি বগাপাড়ায় প্রবেশ মুখেই পাহাড়ীদের  একটি মানববন্ধনের মুখে পড়েন। দুই শতাধিক পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী প্রশান্ত চাকমা প্রতিনিধি দলকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানায়, তারা একটি ষড়যন্ত্রের শিকার। বাঙ্গালীরা তাদের নিজ নিজ ভুমি থেকে উচ্ছেদ করতেই এ হামলা চালিয়েছে।

এ সময় বগাপাড়ায় সরকারী ত্রান বিতরণকালে উপস্থিত তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো: আবু হানিফ এর কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চেয়ে এ জাতীয় ঘটনা থেকে উত্তোরণের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে তাইন্দংয়ে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের হামলা ও গুলিবর্ষনের কথা উল্লেখ করে ইউপিডিএফের চাঁদা আদায়ের রশিদসহ তার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের হাতে একটি লিখিত বক্তব্য পেশ করেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী কয়েকজন সরকারী ত্রান সহায়তা না পাওয়ার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, ঘটনার ১৭ দিন পেরোলেও তারা এখনও খোলা আকাশের নীচে বসবাস করেন।  এসময় তারা ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির পুর্ন বাস্তবায়ন চাই’, ‘অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ পরিবারকে বসতবাড়ি নির্মাণ সহ যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিতে হবে’, ‘আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর’, ‘বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসনের নীরব কেন’ সহ নানা শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড বহন করে।

এরপর প্রতিনিধি দলটি বগাপাড়ায় গেলে পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ প্রতিনিধি দলকে সরকারী ত্রাণ সাহায্য না পাওয়ার কথা বলেন। পরে প্রতিনিধি দলটি সর্বেশ্বরপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ী পল্লী পরিদর্শন করেন। তারা এসময় কয়েকজন পাহাড়ী নেতার সাথে দেড়ঘন্টারও বেশী সময় ধরে কথা বলেন।

বৈঠকে পাহাড়ী নেতারা ঘটনার জন্য বাঙ্গালীদের দায়ী করে প্রতিনিধি দলকে বলেন, পাহাড়ীদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা, তাদেরকে নিজ নিজ ভুমি থেকে উচ্ছেদ করা এবং পাহাড়ীদের ভুমি দখলের জন্যই তারা এঘটনা ঘটিয়েছে। এসময় প্রতিনিধি দলের নেতারা ঘটনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা তুলে ধরবেন বলে পাহাড়ীদের আশ্বস্ত করেন বলে বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাহাড়ী নেতা জানান।

তবে পাহাড়ী নেতাদের সাথে দীর্ঘক্ষণ ধরে টিমের রুদ্ধদ্বার বৈঠক বাঙালী সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এসময় কোন অইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিকে ও স্থানীয় কোন সাংবাদিককেও সেখানে যেতে না দেয়ায় টিমের নিরোপেক্ষতা নিয়ে বাঙালীদের মাঝে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ব মোহন চাকমা, সুকুমার রোয়াজা, শুভদর্শী চাকমা, নয়ন জ্যোতি চাকমা, ফনি ভূষণ চাকমা প্রমূখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন