তামাক কোম্পানির দখলে লামার আবাদি জমি

lama pic 11.02

লামা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামা উপজেলা অন্যান্য উপজেলার মত এতটা উঁচু নিচু নয়। রয়েছে বিস্তৃর্ণ অনেক বিল, সমতল চাষাবাদ যোগ্য প্রচুর আবাদি জমি। লামা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৫শত হেক্টর। কিন্তু বর্তমানে এই উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ আবাদি জমি কৃষি অফিসের অব্যবস্থাপনার কারণে তামাকের দখলে চলে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় চাষীরা।

সরজমিনে দেখা যায়, লামা উপজেলার সকল বিল, মাঠ, নদীর পাড়, পাহাড়ী ও সমতল জমির ৯০ শতাংশ তামাক চাষের দখলে চলে গেছে। লামা উপজেলায় তিনটি তামাক কোম্পানির ৩৫জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিশ্রমে সিংহভাগ চাষী জমিতে তামাকের এই আধিপাত্য। অথচ লামা কৃষি বিভাগের ১জন কর্মকর্তা ও ২২জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও তাদের কার্যক্রম চোখে না পড়ার মত।

লামা পৌরসভার কৃষক ছিদ্দিক, নীলকান্ত বড়ুয়া, মংবাচিং মার্মাসহ একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি পন্য চাষ করে কৃষি অফিসের কোন সহায়তা পাওয়া যায় না। তাই আমরা আগে ধান ও শস্য চাষ করলেও বর্তমানে তামাক চাষ করছি। তামাক কোম্পানির ফিল্ড অফিসাররা চাষাবাদে হাতে কলমে আমাদের শিক্ষা দেয় এবং নানাবিধ সহায়তা করে। সে তুলনায় কৃষি বিভাগের সহায়তা অপ্রতুল। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে অবহেলা, দায়িত্ব পালনে অনিহা, কৃষকের সাথে দূরত্ব, সরকারের কৃষি উন্নয়নে গৃহীত নানান প্রকল্প কৃষককে অবহিত না করা, সার ডিলারদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে সার বাণিজ্য, কৃষি উপকরণ বিতরণে পক্ষপাতিত্ব, কৃষকদের সাথে নিয়মিত কৃষি সমাবেশ না করা, বীজ বিতরণে অনিয়ম, পণ্য বিপননে অসহযোগিতাসহ ব্যাপক দুর্নীতির কারণে সিংহভাগ আবাদি জমি আজ তামাকের দখলে চলে গেছে বলে জানায় তারা।

লামা উপজেলা পরিবেশ রক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এসকে খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন জানান, কৃষকের সাথে কৃষি অফিসের দূরত্বতার কারণে তামাক চাষ আজ লামাকে গ্রাস করেছে। সহনীয় পর্যায়ে তামাক চাষ কমিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের আন্তরিকতা কামনা করেন তিনি।

তামাকের আগ্রাসন নিয়ে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রুস্তম আলীর বলেন, তামাক চাষীদের কোম্পানিরা যে সুবিধা প্রদান করছে কৃষি অফিস তা দিতে না পারায় তামাকের আবাদ বেড়েছে। ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ বলেন, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে নানান পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে সামনে আরো কার্যকর নানান কর্মসূচী হাতে নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষীদের কৃষি বিষয়ক পরামর্শ প্রদান, উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান, মাতৃবীজ সরবরাহ, সার ও সার জাতীয় দ্রব্যের আমদানী, উৎপাদন, বিপনন ও নবায়ন নিবন্ধন, বাগান স্থাপনে সহযোগিতা, উদ্যান ফসল চাষে পরামর্শ ও নার্সারী স্থাপনে সহায়তা প্রদান, কেমিক্যাল পেষ্টিসাইড, বায়ো পেষ্টিসাইড, মাইক্রোবিয়াল পেষ্টিসাইড রেজিস্ট্রেশন প্রদান, পেষ্টিসাইড আমদানি লাইসেন্স প্রদান, পেষ্টিসাইড ফরমুলেশন লাইসেন্স প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত পন্যের আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) স্বাস্থ্য সনদ ও ছাড়পত্র প্রদান সহ নানান সেবা দেয়ার কথা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন