দীঘিনালার ১২ গ্রামের চিত্র পাল্টে দিতে পারে কেবল একটি সেতু

dighinala-merung-marisha-brize-pic-02-copy

দীঘিনালা প্রতিনিধি:

নদীর ও পারে রয়েছে ১২টি গ্রাম। কারো কোন প্রকার রোগ হলে কাঁধে করে নদী পারাপার করতে হয়। কৃষি উৎপাদিত সকল পণ্য নদী পারাপারের কারণে কম দামে বিক্রি করতে হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকাবাসী একটি সেতু দাবী করেও তা বাস্তবায়ন করাতে পারেনি! এখানে একটি সেতু নির্মিত হলে পুরো ১২টি গ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে। কথাগুলো জানালেন, স্থানীয় মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রহমান কবির রতন।

তিনি আরো জানান, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। কিন্তু এখানে সেতু না থাকায় ৩০ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের এ উপজেলায় আসতে হয়। এতে করে দুই উপজেলার লোকজনের অনেক মূল্যবান সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে।

জানাযায়, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের হাজাধন মনিপাড়া, বীরবাহু হেডম্যান পাড়া, ছোট হাজাছড়া, পূর্ববাচা মেরুং, কাঙ্গারিমাছড়া, নেত্রজয় কার্বারীপাড়া, অঙ্গদা মাষ্টারপাড়া, ছদকপাড়া, সুরেশ কার্বারীপাড়া, অনীন্দ্র কার্বারীপাড়া,ও পানছড়ি পাড়া ১২টি গ্রামের উপজাতি-বাঙ্গালি মিলে প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস। মেরুং ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাইনী নদী এ ১২টি গ্রামকে সকল প্রকার উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে রেখেছে। এখনো এসব গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার কৃষকরা। কিন্তু দীর্ঘদিনেও মেরুং বাজার ঘাট এবং হাজাধন মনিপাড়া এলাকার সাথে মাইনী নদীর উপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় সকল প্রকার উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে আছে।

এব্যাপারে মেরুং বাজারের ব্যবসায়ী মো. হারুন মিঞা জানান, মাইনী নদীতে সেতু না থাকায় ওই ১২ গ্রামের উৎপাদিত কৃষি পন্য কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ওই এলাকার উপজাতী এবং বাঙ্গালি কৃষকরা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

ছোট মেরুং বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নমিতা চাকমা (৭ম শ্রেণি), সবিতা আক্তার (৯ম শ্রেণি) জানান, প্রতিদিন খুব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয় আমাদের। কারণ কখন যে নদীতে পড়ে বই খাতা ভিজে যায়।

উপজেলার মেরু(দক্ষিণ)ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জহির উদ্দীন জানান, গত আওয়ামী লীগ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনায়লয়ের সাবেক মন্ত্রী কল্পরঞ্জন চাকমা এবং বিএনপি সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল অদুদ ভুইয়াও এসব গ্রামের যোগাযোগের দূর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মো. মাসুম জানান, বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা আসতে সময় লেগেছে প্রায় দেড় ঘন্টা। এখানে মাইনী নদীতে সেতু হলে আধা ঘন্টায় দীঘিনালায় আসা যেত। বিশেষ করে এখানেসেতু হলে মেরুং বাসীর চাইতে বাঘাইছড়িবাসী বেশী উপকৃত হবে।

ছোট মেরুং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোকলেছুর রহমান জানান, মাইনী নদীতে সেতু না থাকায় ওই এলাকার শতাধিক শিক্ষার্থী চরম ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। বিশেষ করে বর্ষাকালে নদী পারাপার আরো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মেরুং এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা এ মাইনী নদী।

মেরুং ইউপি চেয়ারম্যান মো. রহমান কবির রতন জানান, এখানে মাইনী নদীর  উপর সেতুটি নির্মিত হলে পুরো এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। তাই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এখানে একটি সেতু নির্মান অতিব জরুরী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন