সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় অর্ধশত প্রস্তাব

fec-image

টেকনাফের সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় অর্ধশত প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের শতাধিক সমস্যা নির্ধারণ করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বিরল জীববৈচিত্র‍্য রক্ষা এবং ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণে রবিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে সভা থেকে এসব সিদ্ধান্ত আসে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন, কক্সবাজার-০১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-০২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ওশনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর।

কক্সবাজার জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, সেন্ট মার্টিনকে বাঁচাতে হলে সেখানে পর্যটক যাওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিটি ঘরকেই ইকোট্যুরিজমে পরিণত করে সেখানেই পর্যটকদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, এত সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভ নেই। আপাতত তিন বছর সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাওয়া বন্ধ করা দরকার। যাঁরা সেন্ট মার্টিন নিয়ে বাণিজ্য করেন, কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করছেন, তাঁরা প্রবাল দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নিয়ে মোটেও ভাবেন না।

সভায় সেন্ট মার্টিনের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া গেলেও এখন অনেকগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে। তিন ধরনের কাছিমের প্রজননস্থান সেন্ট মার্টিন। কিন্তু পরিবেশদূষণে কাছিমগুলো ডিম পাড়তে আসছে না।

সভায় সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় অন্তত ৫১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় মানুষের জন্য ইকোলজিক্যালি বাসস্থান তৈরির সুযোগ, দ্বীপের বাসিন্দাদের পেশাগত আইডি প্রদান, অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা, দ্বীপের জমি ব্যবহারে নীতিমালা প্রণয়ন, হোটেল-রিসোর্টের ধারণক্ষমতা নির্ধারণ, প্রতিদিন কী পরিমাণ পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণে যাচ্ছেন, তা নিরূপণ, দ্বীপে নির্মিত সরকারি স্থাপনা বা রেস্টহাউসগুলো শুধু দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার, সাগরে বর্জ্য ফেলা বন্ধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১০০ মিটার অন্তর ডাস্টবিন স্থাপন ও ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দ্বীপে নিস্তব্ধতা ও শান্তি বজায় রাখা, আলো, ফানুস, আতশবাজি ও উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, সেন্ট মার্টিন সৈকতে ধূমপান নিষিদ্ধ, পাখি, মাছ, কচ্ছপ, কাঁকড়া ও প্রবাল রক্ষায় দ্বীপে স্পিডবোট চলাচল নিষিদ্ধকরণ, শব্দদূষণ রোধে যন্ত্রচালিত মোটরসাইকেল, ভটভটি এবং ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চলাচল নিষিদ্ধ করে ম্যানুয়াল যানবাহন যেমন রিকশা-ভ্যান ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। পাশাপাশি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পুরোপুরি ঘুরে দেখতে গেলে একজন পর্যটককে এক হাজার টাকা ফি এবং রাতে হোটেলে অবস্থান করতে হলে সরকারি কোষাগারে দুই হাজার টাকা জমা দিতে হবে। সেই টাকা জাহাজের টিকিট বা হোটেলকক্ষ ভাড়ার সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে।

এ ছাড়া দ্বীপ বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর উপকূলীয় বন বিভাগের পরামর্শে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চারপাশে অন্তত ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ, কেয়াবন সৃষ্টি করবে। পর্যটন ও দ্বীপবাসীর জন্য একটিমাত্র জেটি তৈরি করতে হবে। জেটি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছাড়পত্র দেবে। দ্বীপে বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চল করতে হবে। সব হোটেল-মোটেল দোকান মালিক কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সুয়ারেজ সিস্টেম স্থাপন করবে।

গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনু্ষ্ঠিত বিশেষ সভায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বিরল জীববৈচিত্র্য রক্ষার নিমিত্ত গৃহীত খসড়া সুপারিশমালা ও তা বাস্তবায়ন কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন বক্তারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন