ধেয়ে আসছে ‘মহাসেন’: কক্সবাজারে ৩ নং সতর্কতা সংকেত

উপকূলমুখী ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’
 ডেস্ক নিউজ:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। এখন অবস্থান করছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৪৫ কিলোমিটার দূরে। মহাসেন ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। উত্তাল সাগরে বহাল রয়েছে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত।

রোববার দুপুরে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল।

শনিবার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৮০০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করা নিম্নচাপ একশ’ দশ কিলোমিটার এগিয়ে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে রূপ নেয়, যা উৎপত্তিস্থল থেকে বর্তমানে চারশ’ কি.মি. এগিয়ে এসেছে।

তৃতীয় শতকে শ্রীলংকা শাসন করা রাজা মহাসেনের নামে এই ঝড়ের নামকরণ ‘মহাসেন’ করেছে এস্কাপ (ইএসসিএপি) প্যানেল। তথ্য সংরক্ষণ ও বোঝানোর সুবিধার জন্য ঝড়গুলোর নাম আগেই ঠিক করে রাখা হয়।

শনিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত মহাসেন উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩৬০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩৯০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সাইক্লোনের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ মহাসেন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং সংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমান বাহিনীর যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৬ কি.মি. পর্যন্ত উঠতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হযেছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক

coxsnewsandonepicture Coxs Mohasen preparation meeting
 আমাদের কক্সবাজার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় সব প্রকার প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন। প্রস্তুতি সভায় কক্সবাজারের উপকূলের সকল ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র গুলোকে খালি করে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও রেড ক্রিসেন্ট সহ সকল স্বেচ্ছাসেবকদের ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। অপরদিকে বৈঠকে জরুরী শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদের কথাও বলা হয়।
জেলা কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল এবং সমন্বয় সেল খোলা হয়েছে। আগামী কাল থেকে কক্সবাজারের নিচু এলাকায় মাইকিং করার পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ১১৩ টি জরুরী মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ কাজল কান্তি বড়–য়া। সভায় কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন