পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে পানছড়ি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে নিয়োগ

স্টাফ রিপোর্টার:

পার্বত্য এলাকায় চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রথমত যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হলো স্থায়ী বাসিন্দা সনদ। গত ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ইং তারিখের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় পানছড়ি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ ও কেন্দ্রের ২ কিলোমিটারের মধ্যে নিজ বাড়ি থাকতে হবে মর্মে শর্তাবলী উল্লেখ ছিল। কিন্তু এলাকার সঠিক কাগজ দাখিলকারীদের বাদ দিয়ে ভুয়া কাগজ দাখিলকারী জেনেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল কেয়ারটেকার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেয়ার আগে এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়া সত্বেও জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশানের ভূমিকায় হতাশ পুরো উপজেলাবাসী। বর্তমানে বহাল তবিয়তে মডেল কেয়ারটেকার হিসাবে সাব্বির মাহামুদ রশিদি নিয়োজিত থাকলেও পানছড়িবাসীর নিকট সে মডেল দুর্নীতিবাজ হিসাবে পরিচিত।

কিছুদিন আগে মডেল দুনীর্তিবাজ সাব্বির মাহমুদের হাত ধরে গণশিক্ষা কেন্দ্রে চাকুরী পায় আবু আবদুল্লাহ। তিনি ছিলেন পানছড়ি থানা মসজিদের ইমাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম কেন্দ্রের শিক্ষক। অথচ সাব্বির মাহামুদের মতো অস্থায়ী হয়েও আবু আবদুল্লা শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম কেন্দ্রের শিক্ষকতা কিভাবে পায় তা নিয়ে এলাকাবাসীর রয়েছে নানা প্রশ্ন।

গণশিক্ষা কেন্দ্রে নারী বিষয়ক ঘটনা ঘটার পরেই তার জাল সনদ ও অন্যান্য স্থানের কুকীর্তিও বেরিয়ে আসে। যা সাব্বির মাহামুদের সাথে হুবহু মিল রয়েছে। পানছড়ি উপজেলার মডেল কেয়ারটেকার সাব্বির মাহামুদ রশিদিও তার মতো একজন ভূয়া কাগজ দাখিলকারী অস্থায়ী বাসিন্দা। বর্তমানে আবু আবদুল্লা পলাতক থাকলেও সাব্বির মাহামুদ রয়েছে বীর বেশে।

আবু আবদুল্লার নাটকের রেশ না কাটতেই জন্ম দিল আরেক নাটকের। পানছড়িতে কিছু ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম কেন্দ্রের শিক্ষক নিয়োগের দরখাস্ত আহ্বান করা হলে অনেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলাফল সিটও খাগড়াছড়ি ইসলামিক ফাউন্ডেশানে পাঠানো হয়। কিন্তু সাব্বির মাহামুদ এ ফলাফল দুনীর্তি করে পরীক্ষায় অংশ না নেয়া একজনকে জেলা অফিসের সাথে আঁতাত করে নিয়োগ দেয় গণশিক্ষা কার্যক্রম কেন্দ্রের শিক্ষক হিসাবে।

পানছড়ি উপজেলার ৩নং সদর পানছড়ি ইউপির মুসলিমপাড়া গ্রামে এ কেন্দ্রে চাহিদামতো কোন শিক্ষার্থীও নেই। তাছাড়া একি গ্রামের ৫০ গজের মধ্যেই দুটি কেন্দ্র। যে গ্রামে লোকবলের সংখ্যা এক থেকে দেড় শতাধিক।

পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে মুসলিমপাড়া কেন্দ্রে কিভাবে শিক্ষক নিয়োগ পেলো এ ব্যাপারে সাব্বির মাহামুদের কাছে জানতে চাইলে সে এ প্রতিবেদককে কোন তথ্য দিতে নারাজ। তার নিকট কোন কাগজপত্র নেই বলেও সরাসরি জানিয়ে দেয়। পানছড়ি ইসলামিক ফাউন্ডেশানে সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা মো. নুরুনব্বীর নিকট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ পত্রাদি পানছড়ির মডেল কেয়ারটেকারের নিকট উপরের ফাইলেই রয়েছে। তাছাড়া পরীক্ষা না দিয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক এতদিন অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিল জুলাই থেকে সে নিয়মিত হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়ে সে কিভাবে নিয়োগ পেলো তা সাব্বির মাহামুদই ভালো বলতে পারবে।

শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের প্রধান ও পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিকেরও প্রশ্ন পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে কিভাবে নিয়োগ পেলো? পানছড়ি থেকে দেয়া ফলাফল সিটে যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে শুধু তাদের নাম পাঠানো হয়েছে। জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশানে কোন কারুকাজ হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

পরীক্ষায় অংশ নেয়া ও পানছড়ির বিভিন্ন গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের অভিযোগ, এসব নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পানছড়ির অভিজ্ঞ মহলের দাবি ইসলামিক ফাউন্ডেশানের মতো একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে মডেল কেয়ারটেকার সাব্বির মাহামুদসহ দু’নম্বরীদের তালিকা করে তাদের শুধু চাকুরীচ্যুত নয় আইনের কাঠগড়ায়ও দাড় করানো দরকার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন