পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে ১ কোটি টাকার টেন্ডারবাজি
নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি:
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের প্রায় এক কোটি টাকার টেন্ডারবাজির ঘটনা ঘটেছে। টেন্ডারের দুটি গ্রুপের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে একটি ঠিকাদার চক্র। চক্রটি ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় টেন্ডারের প্যাকেজভিত্তিক দু’গ্রুপ কাজ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়। টেন্ডারবাজিতে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙ্গামাটির প্রধান কার্যালয়ে এ টেন্ডারবাজির ঘটনা ঘটে।
অভিযোগে জানা গেছে, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙ্গামাটি প্রধান কার্যালয় চত্ত্বরে সকাল থেকে অবস্থান নেন ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মীরা। ওই সময় টেন্ডারবাক্স ঘিরে বসানো হয় কঠোর পাহারা। ফলে দরপত্র গ্রহণকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রাখা হলেও সাধারণ ঠিকাদার কেউই টেন্ডার জমা দিতে পারেননি। টেন্ডারের ২৭ সিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে কেবল পাঁচটি। সেগুলো কাজ বাগানো ঠিকাদার চক্রের নিয়ন্ত্রিত।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে প্যাকেজ ভিত্তিক দুই গ্রুপ কাজের একটি টেন্ডার আহবান করে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ। কাজগুলো হল প্যাকেজ নং-১ আরসিসি গোলঘর নির্মাণ চারটি, আমব্রেলা সেড নির্মাণ তিনটি, পানি সরবরাহসহ গণচৌশাগার নির্মাণ দুটি ও ৪ দশমিক ২৫ কিলোমিটার রাস্তায় ইট বিছানো এবং প্যাকেজ-২ সোলার প্যানেল সিস্টেম স্থাপন তিনটি। কাজগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায়।
৪ জুলাই বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ শামসুল আজম এসব কাজের টেন্ডার আহবান করেন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ছিল টেন্ডার গ্রহণের শেষ সময়। টেন্ডার বিক্রি করা হয় রোববার পর্যন্ত। টেন্ডারে সিডিউল বিক্রি হয়েছে ২৭টি। কিন্তু ঠিকাদার চক্রের নিয়ন্ত্রিত সরকারি দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর পাহারার মুখে অন্যরা সিডিউল কিনলেও জমা দিতে পারেননি। শুধু নিজেদের নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি সিডিউল জমা দিয়ে কাজ দুটি বাগিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার চক্রটি। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লভ্যাংশ হিসেবে দশ শতাংশ হারে কমিশন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পেশীশক্তি ব্যবহারসহ টেন্ডারে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও দরপত্রগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙ্গামাটি সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন বলেন, টেন্ডারে কোনো রকম ঝামেলা বা বাধা-বিপত্তির ঘটনা ঘটেনি। দরপত্র সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।