পাহাড়ি গ্রামে তীব্র পানি সঙ্কট
স্টাফ রিপোর্টার:
পাহাড়ি ছড়াগুলো পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। তাই রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের গ্রামগুলোতে তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়াগুলো। পাহাড়ি গ্রামের আসে পাশে কোন নদী-নালা, খাল-বিল না থাকায় পানির চাহিদা তীব্র হয়ে উঠেছে। ছড়াতে পানি না থাকার কারণে বিপাকে পড়েছে অনেকেই।
কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী টিএস তালুকদার জানায়, পার্বত্যাঞ্চলে ছড়াকে কেন্দ্র করেই এক সময় গড়ে উঠেছিল ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রাম। তাই পাহাড়গুলোর নামও ঝিরি, ঝর্ণা কিংবা ছড়াকেন্দ্রিক নামে পরিচিত। যেমন-চোংড়াছড়ি, বড়ইছড়ি, কুতুবছড়ি, বগাছড়ি, মঘছড়ি, মানিকছড়ি, সাপছড়ি, বিলাইছড়ি। শুধু পাড়ার নাম নয়, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার নামও ছড়া কেন্দ্রিক। তাই পাহাড়ি অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ ছড়ার উপর নির্ভরশীল।
পাহাড়ি গ্রামের মানুষগুলো এসব ঝিরি-ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন পানির চাহিদা মিটাতো। আবার ছড়ার পানি দিয়ে চাষবাদও করা হতো। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের কারণে পাহাড়ি ছড়াগুলো পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে ভাটা পড়েছে চাষাবাদেও। স্থবির হয়ে পড়েছে পাহাড়ি মানুষের জীবন ব্যবস্থা।
কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবিমল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্না, রাইখালী ও চিৎমরম এলাকায় বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর একমাত্র পানির উৎস হচ্ছে পাহাড়ি ছড়া-ঝিড়ি। ছড়াগুলো পানি শূন্য হয়ে পড়ায় এসব গ্রামে পানি সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এ সমস্য দেখা দেয়। কারণ বৃষ্টিপাত না হলে ছড়ায় পানি থাকে না। আর পানি না থাকার কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ দিলদার হোসেন বলেন, আগে পানির কষ্ট আরো প্রকট ছিল। উপজেলা সদরেও পানির কষ্ট ছিল অসহনীয়। গ্রাম পর্যায় সরকারি ও ব্যক্তিগত কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় আপাতত উপজেলা সদরে পানির কষ্ট কিছুটা দূর হলেও সমস্যা এখনো আছে। আর দূর পাহাড়ি গ্রামগুলো কষ্টের সীমা নাই। তবে পানির কষ্ট থেকে জনগণকে রক্ষা করতে পার্বত্য মন্ত্রণালয় এবং রাঙামাটি জেলা পরিষদ পদক্ষেপ নিয়েছে। গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে পানির কষ্ট দূর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অভিযোগ উঠেছে, পার্বত্যাঞ্চলে প্রাকৃতিক বন, পাথর ও বৃক্ষের শিকড় থেকে ছড়া, ঝিড়ি, ঝর্ণা ও নদীর পানির সৃষ্টির মূল উৎস। কিন্তু পাহাড়ে জুমচাষ ও আবাদে বন উজাড়ের ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব পাহাড়ি ঝর্ণা, ছড়া, ঝিড়ি। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছে পরিবেশ বিষেশজ্ঞরা।