পেকুয়ায় শীঘ্রই চালু হচ্ছে বহুদিনের প্রত্যাশিত পল্লী বিদ্যুৎ সাবস্টেশন

pic pekua 23-05-2015

এম.জুবাইদ, পেকুয়া:
চলমান গ্রীষ্মের মৌসুমে পেকুয়ার লোডশেডিং আর গরমে অতিষ্ট মানুষ। বাড়ি ঘর থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ নির্ভরশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রায় অচল হওয়ার উপক্রম। লাগামহীন লোডশেড়িংয়ের কারণে এলাকার সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বিদ্যুতের লাগামহীন গোলযোগের পাশাপাশি জরাজীর্ণ লাইন সংস্কার না হলে সাবস্টেশন দিয়েও সরবরাহ নিশ্চিত হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিভিন্ন পেশার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুনতে হচ্ছে দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকার লোকসান। দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লেও উপজেলার সাত ইউনিয়নের গ্রাহকরা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ। এমন অবস্থায় পেকুয়ায় বিদ্যুৎ গ্রাহকের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত সাবস্টেশন অবশেষে অনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ মেগা: ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সাবস্টেশন উপজেলার ১২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের সেবা পৌঁছিয়ে দেবে। ২০১০ সালের জুলাই এ প্রস্তাবিত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে ১.৮ মিলিয়ন (১৮ লক্ষ) বিদ্যুৎ গ্রাহক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় গত ৩ মাস পূর্ব থেকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ি এলাকায় প্রস্তাবিত ৩৩ শতক জায়গার উপর নির্মিত এ সাবস্টেশনের কাজ শুরু হয়। ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিমার্ণাধীন সাবস্টেশনের কাজ প্রায় শেষের পথে। চলিত মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে কাজ সম্পন্ন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্টেশন থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ চালু হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

উপজেলামূখী মানুষ কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনের চাহিদা পূরণ ও প্রশাসনিক নানা কাজের সংগ্রহের বিদ্যুতের অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যেন বিদ্যুৎ পায় না। বিদ্যুতের সঙ্কট আর নিয়ন্ত্রণহীন লোডশেডিংয়ের কারণে বিড়ম্বনার মাত্রা যেন শেষ নেই।

এমতাবস্থায় পেকুয়ায় বিদ্যুতের একটি সাব স্টেশন নির্মিত হওয়ায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে আনন্দের উচ্চাস নেমে এসেছে। বিদ্যুতের আসা যাওয়ার খেলায় প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায় ও মানুষের অপ্রত্যাশিত বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার সম্মুখিন হতে হয় প্রতিনিয়ত। এছাড়া এলাকার রাইচ মিল, বরফ কল, স’মিল,ফটোকপিয়ার কম্পিউটারের দোকান, ছবি তোলার স্টুড়িও, পেট্রোল পাম্প, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ ও মটর ওয়ার্কসপ, চায়ের দোকানসহ সব কিছুই পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।

পেকুয়া চৌমুহুনী নুর জাহান কম্পিউটার অ্যান্ড স্টেশনারী ফটোস্ট্যাট এর মালিক এস এম ছাদেক, শুভেচ্ছা স্টুড়িও এর মালিক এস এম এরশাদ জানান, লো ভোল্টেজের কারণে ব্যবসা হচ্ছে না। লো ভোল্টেজ আশাতীতভাবে কমে আসলে ব্যবসার অনেকটা সুবিধা হবে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কক্সবাজার-১ পেকুয়ার ইনচার্জ কফিল উদ্দিন জানান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কক্সবাজার-১ এর আওতায় উখিয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, পেকুয়াসহ চারটি সাবটেস্শন। এ সাবস্টেশনে ৩৫ মেগাওয়াড় বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এসব সাবস্টেশনগুলোতে বরাদ্দ রয়েছে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

এদিকে পেকুয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা হয় চকরিয়া সাবস্টেশন থেকে। আর এ সাবস্টেশন থেকে চকরিয়া ১৯টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়া ৭টি ইউনিয়নের ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ পায়। বর্তমানে পেকুয়া উপজেলার জন্য দেড় মেগাওযাট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয় চকরিয়া সাবস্টেশন। ওই সাবস্টেশন থেকে পেকুয়ায় যতটুকু বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয় সেটুকু চাহিদা অনুসারে অনেকটা কম।

পেকুয়ায় ৭ ইউনিয়নের ৪ লাইনে বিভক্ত করে এ সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ও এর আশে পাশের এলাকাগুলোকে ভিআইপি লাইনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।তবে শুরুতে একটি লাইনের মাধ্যমে উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা উপকার ভোগ করবে। আগামী দু মাসের মধ্যে অবশিষ্ট তিনটি লাইন চালু করা হবে। যদিও পেকুয়ায় ২.৮০ অথবা ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হলেও ১২ হাজারের অধিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে তা নাম মাত্র বিদ্যুৎ বললে চলে। এতে বৈদ্যুতিক লোডশেড়িং কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

এ ব্যাপারে চকরিয়া জোনাল অফিসের সহকারী ম্যানেজার মাদব নাগ এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে অনেকটাই বেশী। যার ফলে লোডশেড়িংয়ে হিমশিমের সম্মুখিন হতে হয় কর্তৃপক্ষকে। এজন্য অনেক সময় লোহাগাড়া পিডিবি(পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড) থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে চকরিয়ার সাবস্টেশনে সংযোগ দেওয়া হয়। আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগ চকরিয়া বদরখালী সড়কের লাল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে ৩৩ কেবির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১০ কি:মি: বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি স্থাপন করে পেকুয়ায় বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেড়িং কমিয়ে আনতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কক্সবাজার-১ এর মেইন স্টেশন থেকে ৩৩ কেবির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সরাসরি বিদ্যুৎ লাইন পেকুয়া সাবস্টেশনে যোগ করতে হবে।

আর ওই স্টেশন থেকে গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেওয়া হলে লোডশেডিং আর ভোল্টেজ সম্পুর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। চলতি মাসে এ সাবস্টেশন উদ্বোধন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলার সব গ্রাহকরা এ সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ পাবে। এছাড়া পেকুয়ায় সাবস্টেশন চালু হলে পেকুয়ার অপেক্ষামান আবেদনকারী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে। এ সাবটেস্শন স্থাপনের ফলে আগের চাইতে তুলনামূলকভাবে লো ভোল্টেজের মাত্রা কমিয়ে আনা যাবে। ভোল্টেজ বাড়লে অফিস আদালত ও দোকানের মূল্যবান ইলেকট্রনিক জিনিস পত্র নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন