পেকুয়া সমবায় সমিতির ৭ হাজার গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের পাঁয়তারা
পেকুয়া প্রতিনিধি :
দুপক্ষের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মামলা পাল্টা মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে পেকুয়া উপজেলার সর্ববৃহৎ সমবায় সমিতি পেকুয়া কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড। সমিতিটি স্থানীয়ভাবে ঋণদান সমিতি হিসেবেই বেশী পরিচিত।
এতে করে সমিতির প্রায় ৭ হাজার গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ সদস্যরা। গত ১৮ মে সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ আলম কালু বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দপ্তরের উপ-নিবন্ধক (বিচার) এর কাছে ২৪ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কালবে ১৯ মার্চ দেখানো হয় এবং নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একটি মামলা দায়ের করেন। আপীল মামলা নং ১৮/২০১৬। এ মামলায় দীর্ঘ শুনানীর পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের সকল কার্যক্রম ও নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে এক রায় প্রদান করেন উপ-নিবন্ধক (বিচার) শেখ কামাল হোসেন।
এদিকে এর কয়েকদিন পরেই গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ রায়ের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা জর্জ আদালতে মিস মামলা দায়ের করে সমিতির নির্বাচিতরা। ওই মামলার শুনানী শেষে জেলা জর্জ মীর শফিকুল আলম সমবায় অধিদপ্তরের ওই রায়ের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে নথি তলব করেন। এদিকে মামলা পাল্টা মামলায় সমিতির কর্মকর্তারাও আতংকিত হয়ে পড়ছেন। কর্মকর্তারা জানান, উভয় পক্ষই সমিতির কার্যালয়ে মহড়া দিচ্ছে এতে করে যেকোন মুহুর্তে দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে।
সমিতির অফিস সূত্র জানায়, ২৪ মার্চের নির্বাচনে মাষ্টার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সভাপতি, সৈয়দ বেলাল হোছাইন সহ-সভাপতি, মোহাম্মদ তারেক সিদ্দিকী সাধারণ সম্পাদক, ইসমাইল, মোহাম্মদ নাজু, শমশুল ইসলাম সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সমিতির প্রায় ৪ হাজারের অধিক সদস্য এ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ওই নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ে গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সকল কার্যক্রম ও নির্বাচনী ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সংশোধন-২০০২ ও ২০১৩) এর ১৮(৫) ধারা মোতাবেক একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেয় হয়েছে।
জানাযায়, ২৪ মার্চের নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি সহ লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সমিতিটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলম কালু বাদী হয়ে দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দপ্তরের উপ-নিবন্ধক (বিচার) শেখ কামাল হোসেন এ রায় দেন। এই প্রেক্ষিতে জেলা সমবায় অধিদপ্তর এক আদেশের মাধ্যমে জেলা সমবায় অধিদপ্তরের পরিদর্শক দিদারুল ইসলামকে সভাপতি ও সমিতি অপরাপর ৪ সদস্যকে সদস্য করে একটি অর্ন্তবর্তী কমিটি নিয়োগ দিয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা সমবায় অফিসার মো: আবদুল লতিফের স্বাক্ষরিত (স্মারক নং- ৪৭.৬১.২২০০.০০০.০৪.০০৪.১৬-১৪৪০/৮) ওই আদেশে গঠিত কমিটিতে এহতেশামুল হক (সদস্য নং ২০৫০), মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন (সদস্য নং ৩১৫৫), মো: সালামত খান (সদস্য নং ১৭৯৯), তাহসিনুল করিম (সদস্য নং ৪২১৭) কে সদস্য করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচিত কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে গতকাল কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে সমবায় মিস মামলা নং ৫৫/১৬ মূলে জেলা সমবায় অফিসারের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে ১ মাসের জন্য ওই কার্যাদেশ বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচিত সভাপতি মাষ্টার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। জেলা ও দায়রা জর্জ মীর শফিকুল আলম ২৬ সেপ্টেম্বর এ আদেশ দেন বলে জানান তিনি। এদিকে নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলার বাদী পক্ষ জানিয়েছেন নির্বাচনী তপশীল অনুয়াযী নির্বাচন হওয়ার কথা ১৯ মার্চ। কিন্তু কথিত নির্বাচন কর্মকর্তার যোগসাজসে ১৯ মার্চ নির্বাচন করে ২৪ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এমনকি ওই নির্বাচনে মৃত ব্যক্তির ভোট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন তারা। এ ছাড়াও ওই নির্বাচনে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।
জানাযায়, গত মার্চ মাসে মহা ধুমধামে ওই সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৫ হাজারেরও অধিক সদস্য প্রত্যক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। সমিতির নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ভোটারকে ১৫০ টাকা করে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার উপরে ভাতা প্রদান করা হয়। নির্বাচনের পরে শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিতিদেরও দেয়া হয় ভাতা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন প্রতিটি নির্বাচনে সমিতির প্রায় ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা মতো খরচ হয়।
সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, মামলা পাল্টা মামলায় পেকুয়ার ঐতিহ্যবাহী এ সমিতিটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। এখন সমিতির প্রায় ৭ হাজার সদস্য সমিতির স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে সমিতির সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিতে আবেদন করেছেন বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা সমবায় অফিসার ওসমান গণির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মোহাম্মদ আলম নামের এক সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় সমবায় দপ্তরের উপ- নিবন্ধক (বিচার) এর এক রায়ের প্রেক্ষিতে জেলা সমবায় অধিদপ্তর একটি অর্ন্তবর্তী কমিটি নিয়োগ দিয়েছে। সমবায় আইন অনুসারেই সমিতি পরিচালিত হবে। শুনা যাচ্ছে, নির্বাচিত কমিটিও কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে একটি মিস মামলা করে ওই আদেশের কার্যাদেশ স্থগিত করেছেন। আদালতের কপি পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
তথ্যসূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালের জুন মাসে মাত্র ১৩ জন সদস্যের ৩২৫ টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল পেকুয়া কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:। পেকুয়া উপজেলার বৃহত্তম এ সমিতিটি ‘ঋণদান সমিতি’ নামেই সবার কাছে পরিচিত। বর্তমানে এ সমিতি সদস্য সংখ্যা ৭ হাজারের উপরে। ভোটার রয়েছে ৬ হাজার ৪০৪ জন। স্থাবর অস্থাবর সম্পদ মিলে বর্তমানে সমিতির সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপরে।