প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পরও শ্রেণীকক্ষ সঙ্কটে নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

Nayapara School News_Alikadam-2

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):

প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পার হতে চললেও অবকাঠামোগত সমস্যা এখনো কাটেনি আলীকদম উপজেলা সদরের অনতিদূরে স্থাপিত নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। উপজেলায় ২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গত কয়েকবছর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মানদণ্ডে উন্নীত হয়েছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান। কিন্তু শিক্ষার্থী অনুপাতে এ বিদ্যালয়টির শ্রেণীকক্ষ বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ৮০ শতক জমির ওপর নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালাভ করে। ৫০ বছর আগে দুর্গম পার্বত্য জনপদ আলীকদমে যে ক’টি বিদ্যালয় শিক্ষার আলোকবর্তিকা ছড়িয়েছিল তার মধ্যে এ বিদ্যালয়টির ভূমিকা ছিল অন্যতম। বর্তমানে উপজেলার আনাচে-কানাচে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়সমূহের অবকাঠামো বিনির্মাণ হলেও প্রদীপের নীচে অন্ধকার হয়ে আছে এ বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মাতামুহুরীর কূলে বিদ্যালয়টির অবস্থান। ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর আলোর ঠিকানা এ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। বিগত ছয়বছর ধরে এ বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক।

২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের জেলা প্রশাসক কে.এম তারিকুল ইসলাম এ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পরিদর্শন বহিতে উচ্ছস্বিত প্রশংসাবাক্যে লিখেন- “শিক্ষকদের কক্ষটি যথেষ্ট গোছানো ও সুন্দর। মার্জিত, শিক্ষা উপকরণে সজ্জিত। ছাত্র-ছাত্রীদের জাতীয় বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষান্তে আমি সন্তুষ্ট। শ্রেণীকক্ষের সমস্যা প্রকট। ১টি কাচা ও ১টি পাকা ভবন। পাকাভবনটি দ্বিতল বিশিষ্ট হলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে”।

                                                         Nayapara School News_Alikadam

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একটি পাকা ও একটি সেমিপাকা ভবনের ৫টি কক্ষের একটিতে অফিসকক্ষ ও চারটি কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় চারটি শ্রেণিকক্ষে ধারণ ক্ষমতার অধিক ছাত্রছাত্রী গাদাগাদি পরিবেশে পড়ালেখা করছে। শ্রেণিকক্ষে চাপের মুখে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকের পাঠদান সঠিকমতো নিতে পারছে না। এছাড়াও শ্রেণিকক্ষের অভাবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিতে নানা সমস্যা বিরাজমান বলে জানা গেছে।

আলাপকালে শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাদাগাদি করে বসে লেখাপড়া করতে কষ্ট হয়। ক্লাসে বসার জায়গা হয় না। শ্রেণিকক্ষ বাড়ালে পড়ালেখায় সুবিধা হবে’। বছর বছর বিদ্যালয়টির নানাক্ষেত্রে সাফল্য পাহাড়ি জনপদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। স্থানীয় অবিভাবকরা বলছেন, ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।

প্রধান শিক্ষক ফোরকানারা বেগম জানান, প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পার করেছে অত্র বিদ্যালয়। নানামহলে আবেদন-নিবেদন করেও বিদ্যালয়টির শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট নিরসন করা যায় নি। বর্ষা শুরু হলে শ্রেণীকক্ষে পানি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী অনুপাতে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে গত চারবছরের মতো এবারও এ বিদ্যালয়টি শীর্ষে অবস্থান করছে। উপজেলা নির্ধারিত ৭টি ট্যালেন্টপুল বৃত্তির মধ্যে পাঁচটি, ১৭টির মধ্যে পেয়েছে নয়টি আর ১০টি সাধারণ বৃত্তির মধ্যে পেয়েছে চারটি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম. কফিল উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়টি অবকাঠামো সঙ্কট নিরসনে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মহলে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে আশাবাদী হওয়ার মতো কোন খবর এখনো নেই।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ বলেন, বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন