প্রধানমন্ত্রীর খাগড়াছড়ি সফর বয়কটের আহ্বান পিসিপি’র
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক :
আগামীকাল ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)। ৯ নভেম্বর পিসিপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রচারিত “প্রধানমন্ত্রীর খাগড়াছড়ি আগমনে নিরাপত্তার উছিলায় পিসিপি’র পূর্ব নির্ধারিত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন করতে না দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বিবৃতি” শীর্ষক একটি প্রচারপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রচারপত্রে বলা হয়, “পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের মত সমতল অঞ্চলের গারো-মুনিপুরী-রাখাইন-সান্তাল-হাজং-ওরাঁওসহ বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের প্রবল আপত্তি ও বিরোধিতার মুখে শেখ হাসিনার সরকার বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করে “বাঙালি জাতীয়তা” চাপিয়ে দিয়েছে। কোন জাতির জাতীয়তা কেড়ে নেয়ার অধিকার কোন সরকারেরই নেই, সে সরকার যত শক্তিশালী বা ক্ষমতাধরই হোক, পৃথিবীতে সে ধরনের নজীর নেই। অথচ শেখ হাসিনার সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের জাতীয়তা অস্বীকার করে “বাঙালি জাতীয়তা” নির্ধারণ করেছে। ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠন পিসিপিসহ কোন গণতান্ত্রিক সংগঠনই আওয়ামী লীগ সরকারের এ অন্যায় ও অযৌক্তিক আইন মেনে নেয় নি এবং কখনও মেনে নেবে না”।
এতে আরো বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন খাগড়াছড়ি সফর এ অঞ্চলের জনগণের স্বার্থে নয়, নিজের প্রয়োজনে গদি রক্ষার্থে তিনি আসছেন। পাহাড়ি জনগণকে “বাঙালি জাতীয়তা”র হাত থেকে মুক্তি দিতে, তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে, পাহাড়ি-বাঙালি জনগণের সুদূরপ্রসারি মঙ্গল ও কল্যানের জন্য নয়, ধোঁকা দিয়ে আগামী নির্বাচনে ভোট বাড়াবার উদ্দেশ্যেই খাগড়াছড়িতে প্রধানমন্ত্রীর আগমন, সফরের উদ্দেশ্য বুঝে নিতে যাতে কারোর ভুল না হয়।…আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বারে বারে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি জনগণের অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন অংশটিকে আঞ্চলিক পরিষদের গ্যাড়াকলে বেঁধে রেখেছে, জনগণের কথা বলার তিন সংসদ আসনও দখলে নিয়েছে। পাহাড়ি জনগণকে সংগঠনহীন-প্রতিরোধহীন ও বাকরুদ্ধ করার সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে নি, উল্টো “বাঙালি জাতীয়তা” চাপিয়ে দিয়েছে। ভূমি বেদখল অব্যাহত রয়েছে, ভূমি কমিশন অকার্যকর রেখেছে, সেনা ক্যাম্প নির্মাণ-সম্প্রসারণ অব্যাহত গতিতে চলছে, তাইন্দ্যং-রাঙামাটি শহরে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞের হোতারা সরকার-প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় দাপট দেখিয়ে ঘুরছে, আবারও হত্যাকাণ্ড ও ভিটেমাটি ছাড়া করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে কোন লজ্জায় বা দায়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রী খাগড়াছড়ি সফরে আসছেন সেটাই আমাদের প্রশ্ন।”
পিসিপি’র প্রচারপত্রে আরো বলা হয়, “বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিলপূর্বক পাহাড়ি জনগণের স্ব স্ব জাতীয়তা স্বীকৃতি দিয়ে, প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত, বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দিয়ে, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে এবং বহিরাগতদের জীবিকার নিশ্চয়তাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করেই শেখ হাসিনা খাগড়াছড়ি সফরে আসতে পারেন, তখন পিসিপিসহ গণতান্ত্রিক সংগঠনসমূহ তাকে স্বাগত জানাবে ফুল দিয়ে বরণ করবে। টাকা ছিটিয়ে, লাইসেন্স-পারমিট-ঠিকাদারি-চাকরি নানান প্রলোভন দেখিয়ে দালাল জড়ো করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কথা বলার আসন কেড়ে নেয়ার মতলবে প্রতারণামূলক সফর পিসিপিসহ সকল আন্দোলনরত গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠন তা প্রত্যাখ্যান করবে”।
প্রচারপত্রে ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির সকল উপজেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ১১ নভেম্বর সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়,
- কর্মসূচি সফল করতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ প্রতিবাদী জনতা এগিয়ে আসুন।
- নিজ নিজ এলাকায় প্রতিবাদী সভা-সমাবেশ সংগঠিত করুন এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ১১ নভেম্বরের সরকারি সমাবেশ বয়কট করুন।
- ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে সমবেত হোন!”
Facebook Comment