বদলি আতঙ্কে পানছড়ির ১৫১টি হিল আনসার পরিবার

indexশাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

জেলার পানছড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ বাহিনীর সাথে এলাকায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ১৫১ জন হিল আনসার সদস্য। নিজেদের জীবন বাজি রেখে বিভিন্ন সময়ে তারা অংশ নিচ্ছে অস্ত্র উদ্ধারসহ নানান অভিযান ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে। বিশেষ করে জাতীয়, উপজেলা, ইউপি নির্বাচন, জাতীয় দিবস ও বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলোতে আনসার বাহিনীর অবদান অপরিসীম। নামে মাত্র মাস্টার রোলের এ কর্মচারীরা দেশ রক্ষার কাজে দিন প্রতি ২৫০ টাকার বেতনেই পরিবার পরিজন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। তাদের নেই কোন ঝুঁকি ভাতা, নেই কোন যাতায়াত খরচ। আর অসুখ-বিসুখ হলে হাজার হাজার ঋণের বোঝা নিয়েই চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়।

এরি মাঝে বিভিন্ন সময়ে তাদের মাঝে বিরাজ করছে বদলি আতঙ্ক। মাস্টার রোলের কর্মচারীদের বদলির কোন বিধান না থাকলেও প্রতি মাসেই কেউ না কেউ ফেলছে চোখের জল। নিজ এলাকায় থেকে স্বল্প বেতনের এ মাস্টার রোলের চাকুরীতে কোন রকম সংসার চললেও বদলি জনিত কারণে অনেকেই হয়ে পড়ে দিশেহারা। অথচ পানছড়ি হিল আনসার বাহিনী একটি সু-শৃঙ্খল বাহিনী। অদ্যবধি পর্যন্ত পুরো জেলায় পানছড়ি হিল আনসার বাহিনীর রয়েছে আলাদা খ্যাতি। অথচ প্রতিনিয়ত উপরস্থ কর্মকর্তাদের কলমের খোঁচায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পানছড়ি হিল আনসার সদস্যরা।

যার প্রমাণ গত ৮-৩-২০১৫ ইং তারিখে জেলা কমাড্যান্ট মো: আবদুল মজিদ স্বাক্ষরিত ২৮৫ নং স্মারক মূলে জেলার সর্বমোট ৪৮০ জন হিল আনসারের মধ্যে ৬২ জনকে অন্য উপজেলায় বদলি করা হয়। তার মধ্যে পানছড়ি উপজেলার রয়েছে ২১ জন। তাছাড়া ডিসেম্বর’১৪ সালে আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য পুরো জেলা থেকে ২৬ জন সদস্যকে চূড়ান্ত করে ৪২ দিনের ট্রেনিংয়ের জন্য শফিপুর আনসার একাডেমিতে পাঠানো হয়। এর মাঝে পানছড়ির কোন সদস্যকে সুযোগ দেয় নাই উপরস্থ কর্মকর্তারা। এভাবেই উপরস্থদের কলমের খোঁচা-খুঁচির গ্যাড়াকলে চলছে পানছড়ি আনসার বাহিনীর সদস্যদের মানবেতর দিন যাপন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বদলি সংক্রান্ত কোন কিছু হলে তা আর্থিক দফারফার মাধ্যমে আবার বাতিলও হয়। তাই জেলা অফিস থেকে কিছু দিন পর পরই বদলি সংক্রান্ত ঘটনা ঘটে থাকে। তাছাড়া প্রতি বছর আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য বড় একটা বাণিজ্যও হয়। প্রায় ৩৫/৪০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হলেই চূড়ান্ত তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ হয়।

পানছড়ি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মো: কামরুল আহসান চৌধুরী (শিবলী)’র সাথে এ বদলি নিয়ে আলাপকালে তিনি জানান, পানছড়ি হিল আনসারদের বদলির ব্যাপারে সেনা কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশনা ছিল যে বদলি সংক্রান্ত কোন তালিকা করতে জোন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ লাগবে। কিন্তু এ বদলি সংক্রান্ত কোন কিছুই উপজেলা আনসার অফিস ও সেনা সাব জোন অবগত নয়। তিনি আরো জানান, উপরস্থ কর্মকর্তারা বদলি করতেও পারে আবার বদলি বাতিলও করতে পারে।

পানছড়ি সাব জোন সূত্রে জানা যায়, হিল আনসার বাহিনী জোনের সাথেই কাজ করে থাকে। তাই তারা একটি পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা বাহিনীর মতই। কোন অভিযোগ ছাড়া হঠাৎ বদলির আদেশ শুনে জোন কর্তৃপক্ষও হতবাক।

এ ব্যাপারে জানার জন্য জেলা কমান্ড্যান্ট মো: আবদুল মজিদের গ্রামীণ নাম্বারে কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেন নি।

পানছড়ির বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ মহল বলছেন, আনসার বাহিনীর সদস্যদের প্রতি মাসে মাসে বদলি ও আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের নামে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মূল হোতাদের যেন আইনের ফাঁদে ফেলে আটক করে শাস্তি প্রদান করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন