বাংলাদেশ সীমানায় ‘মহাসেন’: উপকূল জুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঝড়ো হাওয়া

 

নিজস্ব প্রতিবেদক,

ঢাকা: ক্রমেই বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি চলে আসছে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। ঘুর্ণিঝড়ের অভাবে এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় হালকা ঝড়ো বাতাস ও মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। 

রাত দুইটা থেকে রাজধানীতেও শুরু হয়েছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ও গুমোট আবহাওয়া। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, পিরোজপুরে রাত তিনটার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল সাথে মৃদু বজ্রপাতসহ ঝড়ো হাওয়া। চট্টগ্রাম অঞ্চলেও প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলাতে ইতোমধ্যেই ঘুর্ণিঝড়ের আগ্রভাগ আঘাত হেনেছে। বইছে ঝড়ো হাওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টিপাত। গত ছয় ঘণ্টা যাবত এটি ২৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে আরো উত্তর-পূর্ব দিকে সরে এসে ক্রমশ: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে এটির অবস্থান ২০.০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৫ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে চট্টগ্রাম থেকে ৩৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা বন্দর হতে ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার হতে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, ভোলার চরফ্যাসন হতে ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং সেন্ট মার্টিন হতে ৩০২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। ঘূর্নীঝড়ের কেন্দ্রের ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বাতাসের বেগ এখন ঘণ্টায় প্রায় ৬২ কিলোমিটার, যা বিক্ষিপ্তভাবে সর্বোচ্চ ৯২ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ অর্জন করছে। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী এটি চট্টগ্রামের উত্তর উপকুলে আঘাত করবে। মূল আঘাতের সম্ভাব্য সময় ১৬ মে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা। এই ঘুর্ণীঝড়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে বাতাসের সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। সেই সাথে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছাসের সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। এছাড়া উপকূলবর্তী কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ (সাত)নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। সমূদ্রের সকল মাছধরা ট্রলার ও নৌ-যানকে তীরের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। মংলা সমূদ্র বন্দরকে ৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের বর্ধিতাংশের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে। অনেক এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে তিন চার ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিও হচ্ছে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাতাসের গতিবেগ খুব বেশি না থাকায় ‘মহাসেন’ ইতিপূর্বে আঘাত হানা ‘সিডর’ বা ‘আইলা’র মতো বিধ্বংসী হবে না। তাছাড়া এখন যেহেতু অনেক জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে করে ‘মহাসেন’ দুর্বল হয়েও পড়তে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’এর কারণে এখনো চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা  কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী,  চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ এই বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। 

অন্যদিকে মংলা সমূদ্র বন্দরকে এখনও পোঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ এই সংকেতের আওতায় থাকবে।  

বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ইতিমধ্যে ভোলায় স্বাভাবিকের চেয়ে তিন/চার ফুট উচ্চতায় নদীর পানি বইছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বরগুনা ও আশেপাশের এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়ার সবশেষ বুলেটিনে আরো বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ-সহ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে চট্রগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধ্বসেরও আশংকা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা, উপকূলজুড়ে আতঙ্ক

মহাসেনের প্রভাবে উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার জনগণের মধ্যে। ইতিমধ্যে উপকূলের জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ-সাত ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্ততি

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে খেপুপাড়া-টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের বর্ধিতাংশের প্রভাবে বুধবার রাত ১০টা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর ৭ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের মূল জেটিতে বন্দরের নিজস্ব তিন মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বন্দর সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, বন্দরের মূল জেটি ও মুরিংয়ে ২১টি জাহাজ আছে। তিন মাত্রার সতর্কতা অনুযায়ী, এসব জাহাজ এখন জোয়ারের সময় পর্যায়ক্রমে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করা হয়েছে।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, চ্যানেল নিরাপদ রাখতে জেটিতে থাকা সব জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সাগরে অবস্থানরত জাহাজের পক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা সহজ হয়। জেটিতে থাকলে জাহাজের আঘাতে জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া চ্যানেলে কোনো জাহাজ ডুবে গেলে বন্দর অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

১৩২৭ টি মেডিকেল টিম

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ মোকাবিলার দুর্গতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য উপকূলীয় ১৩টি জেলায় এক হাজার ৩২৭টি মেডিকেল টিম এবং দুই হাজার ৯৬৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।

বুধবার সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো মন্ত্রী বলেন, “কক্সবাজারে ৪৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১১৬টি মেডিকেল টিম, চট্টগ্রামে ৪৭৯টি কেন্দ্রে ২৮৩টি, ফেনীতে ৮৮টি কেন্দ্রে ৭৮টি, নোয়াখালীতে ২৪৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৫টি, লক্ষ্মীপুরে ১০১টি কেন্দ্রে ৬৭টি, ভোলায় ৩৮৭টি কেন্দ্রে ৯২টি, বরগুনায় ৩৪০টি কেন্দ্রে ৪৬টি, পটুয়াখালীতে ৩৬০টি কেন্দ্রে ১১১টি, পিরোজপুরে ১৬১টি কেন্দ্রে ৭৮টি, ঝালকাঠিতে ২৩টি কেন্দ্রে ৩৭টি, বাগেরহাটে ৯৬টি কেন্দ্রে ৮২টি, খুলনায় ১৭০টি কেন্দ্রে ১১৬টি এবং সাতক্ষীরা ৬৪টি কেন্দ্রের জন্য ১১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মেঘনা উপকূলের মানুষ 

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন’র প্রভাবে বুধবার সন্ধ্যা থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আতঙ্কে দু’টি উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুঁটে চলেছেন। ট্রলার ও নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছেন মেঘনায় মাছ শিকারি জেলেরা।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বিকেল থেকে মাইকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা প্রচার এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত শুরু হলে মেঘনা তীরবর্তী এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুঁটে যাচ্ছেন উঁচু ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। এ সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুঁটে যেতে দেখা যায়।

২১ ইউনিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ

লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ২১টি ইউনিয়ন দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব ইউনিয়নের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিষয়ক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় জেলা প্রশাসক একেএম মিজানুর রহমান জানান,  ১৯০টি প্রতিষ্ঠানে ৫৩ জন করে ৯ হাজার ১০ জন সদস্য কাজ করছেন। ইতোমধ্যে রামগতি এবং কমলনগর উপজেলার জন্য ১শ’ মেট্টিক টন জি আর চাউল ও নগদ ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ১২০ বান্ডিল ডেউটিন রাখা হয়েছে।

এছাড়া জেলার ৫টি উপজেলায় ১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টিকে উপযোগী করে তোলা হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩০ হাজার করে মানুষ থাকতে পারবে বলে জানান।

মহাসেন মোকাবিলায় নৌবাহিনীর ২২ জাহাজ, বিমান বাহিনীর ৪ বিমানও ২১ হেলিকপ্টার প্রস্তুত

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় নৌবাহিনীর ২২টি উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দমকল, রেডক্রিসেন্ট ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে নৌবাহিনীর পাশাপাশি বিমানবাহিনীর চারটি পরিবহন বিমান ও ২১টি হেলিকপ্টার ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় জড়িত রয়েছে।

লামার চারটি ইউনিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ

বান্দরবানের লামা উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে মহাসেন আতঙ্ক। ইতোমধ্যে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী, ফাইতং, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৭নং বিপদ সংকেত ঘোষিত হওয়ার পর পরই ঝুঁকিপূর্ণ এইসব এলাকা সমূহের মানুষ নিরাপদস্থলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।

তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আতঙ্কিত না  হয়ে মহাসেন মোকাবেলায় সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। লামা দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানায়, বিকেল থেকে রাত সাড়ে সাড়ে আটটা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ চার ইউনিয়নের প্রায় ১২০০ মানুষকে ওইসব এলাকা থেকে ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

এদিকে, আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদেরকে খাদ্য, পানি ও ঔষধসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহ এবং রাজনৈতিক দলগুলো সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছেন।

এছাড়া সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের মধ্যে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ, মোমবাতি, দিয়াশলাইসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

চর কুকরী মুকরী পানির নীচে

সাগর উপকূলের কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন ৪/৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে এ ইউনিয়নের সব বাসিন্দাকে স্লাইক্লোন সেন্টারসহ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরার উপর দিয়ে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাসে ইউনিয়নটি তলিয়ে যায়।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় ভোলা-ঢাকা রুটের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সব উপজেলায় ২০টি করে মোটরযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌযান।

ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুকরী-মুকরী, ঢালচর, পর পাতিলা, চর নাসরিন, চর তাজাম্মল, চর জহির উদ্দিন, কলাতলীর চর, চর মোজাম্মেলসহ বিভিন্ন চরের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ এখনও চলছে। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলার বিচ্ছিন্ন এলাকা থেকে মাত্র ৬ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন