‘ বাঘাইছড়িতে বিচ্ছিন্ন ঘটনার বিকৃত ব্যাখ্যা করে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্টের চেষ্টা করছে বিশেষমহল’

N-catagori-1-728x387

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

পার্বত্যজেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের লক্ষ্ণীছড়ি বাজারের দিন মোহন চাকমার স্ত্রীর সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক সদস্যের একটি তুচ্ছ ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ও বিকৃত ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানী রিপোর্টে এ তথ্যে উঠে এসেছে।

ঘটনায় বিবরণে জানা গেছে, পাহাড়ীদের পরিচালিত কয়েকটি সাম্প্রদায়িক ব্লগ, নিউজ মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে যে, বাঘাইছড়ির লক্ষ্ণীছড়ি বাজার সংলগ্ন দিন মোহন চাকমার অনুপস্থিতিতে তার বাড়িতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন জেসিও ও তার দেহরক্ষী দিনমোহন চাকমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। দিনমোহন চাকমা তার বাড়িতে এলে তার স্ত্রী তাকে এ ঘটনা খুলে বললে সবাই জানতে পারে।

অথচ প্রকৃত ঘটনা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানী রিপোর্টে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী লক্ষ্ণীছড়ি সেনাক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল কাদের বাজার সংলগ্ন দিনমোহন চাকমার বাড়ির আঙিনায় গেলে তার স্ত্রী স্বামীর অনুপস্থিতেতে বাড়ীর আঙিনায় সেনাসদস্য দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে। মহিলার চিৎকার শুনে আসেপাশের লোকজন ছুটে আসে। এসময় বাজারে অবস্থানকারী সেনাবাহিনীর আরেকজন কর্পোরালও ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং সকলের উপস্থিতে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে। কিন্তু ঘটনাস্থলের আশেপাশে বসবাসকারী পার্বত্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যরা এ ঘটনা জানতে পেরে সাথে সাথে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে ঘটনার সম্পূর্ণ বিকৃত বিবরণ দিয়ে ইন্টারনেটে প্রচার শুরু করে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ধরণের সামান্যতম অপরাধের ক্ষেত্রেও সবসময় জিরো টলারেন্স দেখিয়ে এসেছে। ঘটনাটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নজরে আসার সাথে সাথে অভিযুক্তকে ক্লোজ করা হায়েছে। সেনাবাহিনী গুরুত্ব দিয়ে এখন ঘটনাটির তদন্ত করছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ব্যাক্তির অপরাধের দায় প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাসূত্র বলেন, আমরা তদন্ত করছি। সত্যমিথ্যা তদন্তের পরই বলা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে এটুকু জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টাকারী একটি গোষ্ঠীর পরিকল্পিত অপপ্রচার এটি। তবু তদন্তে নিরোপেক্ষতার স্বার্থে অভিযুক্তকে ক্লোজ করা হয়েছে।

অপর একটি সূত্র পার্বত্যনিউজকে বলেন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়িতে নিহত সবিতা রাণী চাকমার ঘটনাও এ ধরণের একটি অপপ্রচারের অংশ। সূত্র মতে, সবিতা রানী যেখানে ধর্ষিতা ও নিহত হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা। এই এলাকায় কোনো বাঙালী প্রবেশ করে পাহাড়ী গৃহবধুকে ধষর্ণ ও হত্যা করে ফেলে আসার সাহস করতে পারে না। সূত্র জানায়, মূলত উপজেলা নির্বাচনের আগে পাহাড়ী-বাঙালী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে নির্বাচনী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ ঘটনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎতপরতার কারণে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়ে উল্টো ঘটনাটির দায়ভার বাঙালী, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপাতে তারা বিতর্কিত সিএইচটি কমিশনকে ব্যবহার করছে। সূত্রের দাবী, বাংলাদেশ সরকারের উচিত অতিদ্রুত আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করে প্রকৃত ঘটনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা।

এদিকে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সরকার উপজাতীয়দেরকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার ফলে অতিলোভী বিপদগামী উপজাতীয় যুবকদের ঘটানো ধর্ষনের মিথ্যা দায় নিরীহ বাঙ্গালী যুবকদের উপর চাপানো হচ্ছে। তা নাহলে বাঙ্গালী এলাকার প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার বাইরে যেখানে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রম, সেখানে একজন বাঙ্গালী যুবক কর্তৃক পাহাড়ী মহিলা ধর্ষণের ঘটনা কোনভাবেই বিশ্বাস্য নহে। এটা কল্পিত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। এই নোংরামির প্রতিবাদের ভাষা জানা নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন