বান্দরবানে জেএসএস নেতৃত্ব শূণ্য

জনসংহতি সমিতি

স্টাফ রিপোর্টার:

পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল (জেএসএস) বান্দরবান শাখা নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়েছে। সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুন ভোর রাতে সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের জামছড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্য মং প্রু মারমা (৩৯) কে অপহরণ করে জেএসএস সমর্থিত সন্ত্রাসীরা।

মূলত এরপর থেকে বান্দরবান শহরে জেএসএস শূণ্য হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। মং প্রুকে অপহরণের পর থেকে আওয়ামীলীগ-জেএসএসের মধ্য নিরব লড়াই শুরু হয়েছে। একসময়ের পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় ও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ বন্ধু ছিল জেএসএস। কিন্তু আ’লীগ নেতা মংপ্রুকে অপহরণের পর থেকে দু-দলের মধ্য আরো তিক্ততা বেড়ে চলছে।

এ নিয়ে জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করে বলেন, সরকার ও প্রশাসন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠিদের অধিকারের প্রশ্নে আন্তরিক নয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পার্বত্য বান্দরবান জেলার নেতারা মিথ্যা মামলা দিয়ে জনসংহতি সমিতির নেতাদের জেলে পাঠাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন।

অপহরণ ঘটনায় বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগ অপহৃতের উদ্ধারের দাবীতে হরতাল, অবরোধ, মানবন্ধন ও মিছিল সমাবেশ চালিয়ে আসছে। প্রায় দুমাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে এখনো পর্যন্ত অপহৃতকে উদ্ধার করতে পারেনি।

এদিকে অপহৃতের মেয়ের জামাই হ্লা মং চিং ১৫ জুন বাদী হয়ে অপহরণ ঘটনায় জড়িত জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে.এস. মং, সাধুরাম ত্রিপুরা, জেলা শাখার সভাপতি উছোমং মার্মা, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যাবা মং, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জলি মংসহ ৩৮ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ রহস্য উৎঘাটনে এপর্যন্ত জেএসএস’র ১০ সদস্যকে আটক করেছে। শীর্ষ ১০ নেতা হাইকোর্ট থেকে সম্প্রতি জামিন লাভ করে।

গত শুক্রবার সুয়ালকের আমতলী তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া এলাকায় হত্যার ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেছে উল্লেখ করে মামলায় গত রবিবার উছোমংকে আসামী করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় সোমবার ভোর রাতে শহরের কালাঘাটা এলাকায় নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ মঙ্গলবার রহস্য উৎঘাটনে আদালতে ৮ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

যেখানে  আওয়ামীলীগ নেতা মং প্রু অপহরন মামলায় জেএসএস’র শীর্ষ ৩৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করে সেখানে  জেএসএস সভাপতি উছোমংকে আটককের প্রতিবাদে এ পর্যন্ত জেএসএস একটি মিছিল সমাবেশও  করতে পারেনি জেএসএস।

জেএসএস শীর্ষ ১০ নেতা হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করে ছিল তারাও আত্মগোপনে চলে যায়। জেএসএস উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে বান্দরবান জেলায় কয়েকটি পদ পাওয়ায় তাদের নিজেদের মধ্য অহংকার ও আত্মবিশ্বাস বহুগুন বেড়ে যায়। একারনে জেএসএস আরো বেপরোয়া হয়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় বলে স্থানীয় জনসাধারন মনে করেন।

বান্দরবানের মধ্যম পাড়া জেএসএসের জেলা কার্যালয়ে আগের মত নেতা-কর্মীদের সমাগম নেই। অধিকাংশ সময় তালা দেয়া দেখা যায়। জেলা শহরে জেএসএস বা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কোন নেতাকে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়াও সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন