বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে সংসদ: মন্ত্রীসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন

কেবিনেট মিটিং

স্টাফ রিপোর্টার:
বিচারপতিদের অভিশংসন বা অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফেরাতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপত্বিতে এ অনুমোদন দেয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইঞা সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবগত করেন।
সংশোধিত আইনের খসড়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি এবং সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমতি ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারককে অপসারণ করা যাবে না।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর বিধি অনুযায়ী আইনের খসড়া যাবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। এরপর দশম সংসদের তৃতীয় অধিবেশনেই এ-সংক্রান্ত  বিল উপস্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। আইনটি সংসদে পাস হলে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধন অন্তর্ভুক্ত হবে।
১৯৭২ এর মূল সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে তুলে দেন। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের অনেক রদবদল করা হলেও ৯৬ অনুচ্ছেদের ওই ধারাটি ফিরিয়ে আনা হয়নি।
তবে সম্প্রতি বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করে আইন কমিশন। তার ভিত্তিতেই ফের সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। যার খসড়া উঠলো মন্ত্রিসভায়।

এদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক মনে করেন, বিচারকদের অভিসংসনের ক্ষমতা সংসদকে দিলে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না্। সোমবার দুপুরে আইন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন তিনি।

খায়রুল হক বলেন, “গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইংল্যান্ডে এই ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত গণতন্ত্রের সব দেশেই এটা আছে। ভারতেও এটা আছে।”

বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের অবস্থা উন্নত দেশগুলোর মতো না হওয়ার পরও বিচারক অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দেয়া ঠিক হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সংসদকে এই ক্ষমতা দেয়ার সময় ওই সব দেশের অবস্থাও আমাদের মতোই ছিল।”

১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে। এই ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দিলে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে মন্তব্য করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের দেশে বাহাত্তরের সংবিধানেও এটা ছিল। কিন্তু কাউকে অভিশংসন করা হয়নি।”

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন