বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই আজ

fec-image

ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। শুরুটাও হয়েছে দারুণভাবে। আফগানিস্তানকে হারিয়ে। তবে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি টাইগাররা। তাও ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই বেশ কয়েক বছর ধরেই ক্ল্যাসিক দ্বৈরথে পরিণত হয়েছে । এই ম্যাচ মাঠে গড়ালেই বাড়তি উত্তেজনার পারদ ছড়ায় ভক্তদের মাঝে। বিশেষ করে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের অগ্নিগর্ভ কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা মানে চিত্তাকর্ষক ম্যাচ। মাঠ ও মাঠের বাইরে কথার লড়াইয়েও থাকে সেই ছাপ। আজ বিশ্বকাপে আবারও দল দুটি মুখোমুখি।

পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ম্যাচটা মাঠে গড়াবে দুপুর আড়াইটায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টস।

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত ১১ মুখোমুখি লড়াইয়ে ভারতের জয় ৬টি, বাংলাদেশের ৫টি। ফলে পরিসংখ্যান যথেষ্ট প্রেরণার উৎস বাংলাদেশের। শেষ চার ম্যাচের তিনটিতেও আবার বাংলাদেশ জিতেছে। ভারতের জয় একটি। যদিও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একবারই ভারতকে হারাতে পেরেছিল। ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল সাকিব-তামিমরা। এরপর ২০১১, ২০১৫, ২০১৯ তিনটি আসরেই শেষ হাসি ভারতের। তবে অতীত পরিসংখ্যান দিয়ে যে ম্যাচ জেতা যায় না সেটাই যেন মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ‘আমরা কেবল বৃহস্পতিবারের ম্যাচ নিয়েই ভাবতে পারি। নিজেদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারি প্রতিটি ম্যাচ নতুন ভেবে। প্রতিটি ম্যাচ জেতা সম্ভব। আগে কী হয়েছে, শেষ দুই সপ্তাহে কী হয়েছে সেসব নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। আমাদের হাতে বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য ছয়টি ম্যাচ রয়েছে। ছয় ম্যাচই আমাদের পক্ষে জেতা সম্ভব। এই অনুপ্রেরণাতেই মাঠে নামবো এবং নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলবো।’

নিজেদের অনুপ্রাণিত করে মাঠে নামার কথা বললেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতাটা মোটেও সহজ কোন বিষয় নয়। বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, ভারত। একদলের ঝুলিতে টানা তিন জয়, আরেক দলের একটি। শক্তিমত্তা, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সবকিছু মিলিয়ে ভারতের চেয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ।

ভারতীয় কোচ সুক্ষ্মভাবে বাংলাদেশকে ছোট দল হিসেবে ঘোষণা করলেও সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচের পর বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচ নিয়েই সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা বিরাজ করে। দুই দলের শরীরী ভাষায় ‘খুনে’ মনোভাব ফুটে ওঠে স্পষ্ট! খেলোয়াড়দের বাইরেও দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তরা সামাজিক মিডিয়ায় যুদ্ধে লিপ্ত হন, যেটা কিনা মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ির পর্যায়েও চলে যায়।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে ২২ গজের লড়াই গুরুত্বপূর্ণ। সেই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। এমনিতেই পুনের উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ। স্টেডিয়ামের ১৫ উইকেটের সবকটিই রানপ্রসবা, ব্যাটারদের স্বর্গরাজ্য। কালো মাটির পিচে বল ভালোভাবে ব্যাটে আসে এবং ঠিকঠাক পরিমাণ বাউন্সও করে। বাউন্ডারি ছোট এবং দ্রুত গতির হওয়ায় ম্যাচে প্রচুর চার-ছক্কা দেখা যায়। যেখানে গড় রান ৩০৭। বাংলাদেশকে ভয় দেখাতে এই মাঠে বিরাট কোহলির ব্যাটিং গড় যথেষ্ট। অন্তত পাঁচ ওয়ানডে খেলা হয়েছে বিশ্বের যেসব ভেন্যুতে, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান রেট পুনের। সাত ম্যাচে ওভারপ্রতি রান এসেছে ৬.০৯ করে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতের পাশাপাশি পুনের মহারাষ্ট্র স্টেডিয়ামের নাম আসছেই! অনভ্যস্ততার কারণে এমনিতেই ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রান করতে পারেন না বাংলাদেশ। তার মধ্যে ভারতের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে খেলাটা মোটেও সহজ হওয়ার কথা নয়।

এই অবস্থায় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের একাদশে নিশ্চিত ভাবেই বদল আসছে। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে বাংলাদেশ দল বাড়তি একজন বোলার নিতে মাঠে নামতে যাচ্ছে। এছাড়া গত কয়েক দিন ধরে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হলেও ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামছেন তিনি। ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসান তামিমকে এই ম্যাচ থেকে সরাতেও পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেক্ষেত্রে লিটনের সঙ্গে মিরাজ ওপেনিংয়ে। আর যদি তানজিদ টিকে যান তাহলে শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিয়ে শেখ মেহেদীকে নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।

এছাড়া টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আসতে পারেন নাসুম আহমেদকেও। শেখ মেহেদী ও নাসুম দুজনই ভারতের বিপক্ষে শেষ মুখোমুখিতে ভালো করেছিলেন। দলে থাকার দাবি তারা রাখতেই পারেন। হাথুরুসিংহের নজর আছে তাদের দিকেও, ‘এই ধরণের উইকেটে খেলার জন্য আদর্শ কম্বিনেশন হচ্ছে বাড়তি একজন বোলার নিয়ে খেলা। কারণ, এখানের উইকেট খুব ভালোমানের হয়। সঙ্গে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ লম্বা। এজন্য আমরা একজন বাড়তি বোলারের কথা চিন্তা করছি। তারা (নাসুম ও মেহেদী) ভারতের বিপক্ষে ভালো করেছে শেষ ম্যাচে। আমরা অবশ্যই সেটা বিবেচনায় আনবো। তারা যদি ভারতকে হারানোর উপায় জেনে থাকে অবশ্যই তাদের কথা শুনবো।’

ভারত যতই শক্তিশালী হোক, পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকুক- বাংলাদেশ তো তাদের হারিয়েছে। বর্তমান বাস্তবতা যদিও বেশ ভিন্ন। তারপরও পুনেতে পোর্ট অব স্পেন ফিরিয়ে আনতে পারলে তা অঘটনের চেয়ে কম কিছু হবে না। পোর্ট অব স্পেনের নায়ক ছিলেন মাশরাফি, এবার নায়ক হোন সাকিব, সেই প্রত্যাশা ১৭ কোটির বাংলাদেশির।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ, বিশ্বকাপ, ভারত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন